আজ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : রাত ২:৩১

বার : শনিবার

ঋতু : গ্রীষ্মকাল

মুখোমুখি বসছে ইউক্রেন-রাশিয়া, সাফল্য নিয়ে সংশয়

মুখোমুখি বসছে ইউক্রেন-রাশিয়া, সাফল্য নিয়ে সংশয়

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মুখোমুখি শান্তি আলোচনা মঙ্গলবার তুরস্কে শুরু হতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে। এমন সময় এই মুখোমুখি আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়েছে এবং কিয়েভ জানিয়েছে মস্কোর আগ্রাসনে তারা আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিষয়ে কোনও ছাড় দেবে না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

রবিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফোনালাপে ইস্তানবুলে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসার বিষয়ে একমত হন। তখন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল সোমবার এই আলোচনা শুরু হতে পারে।

কিন্তু সোমবার ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, মঙ্গলবার বৈঠকের সম্ভাবনা বেশি। এর বেশি মন্তব্য করলে আলোচনা প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মুখোমুখি আলোচনা হতে যাচ্ছে, এটি গুরুত্বপূর্ণ।

শান্তি আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতির সুযোগ নিয়ে আশাবাদী নন কর্মকর্তারা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ১০ মার্চ ইউক্রেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক হয়তো পরিস্থিতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

কিয়েভের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, রুশ হানাদার বাহিনী ইউক্রেনে কঠোর প্রতিরোধের মুখে পড়েছে, তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং কৌশলগত ও রসদ সংকটে পড়েছে। এমন অবস্থায় মস্কো হয়তো কিয়েভে নতুন সরকার বসানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ম্রিয়মাণ হওয়ার ফলে সমঝোতায় রাজি হতে পারে।

রাজধানী কিয়েভকে ঘেরাও এবং সরকারি বাহিনীকে অচল করতে ব্যর্থ হওয়ার পর গত সপ্তাহে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা সম্প্রসারণে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছে।

উভয় পক্ষই যুদ্ধ বন্ধের একটি সম্ভাব্য উপায়ের কথা বলছে। যার আওতায় ইউক্রেন হয়তো এক ধরনের আনুষ্ঠানিক নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে পারে। কিন্তু ২০১৪ সালে মস্কোর দখল করা ক্রিমিয়া এবং ডনবাস অঞ্চলের ভূখণ্ডগত দাবি থেকে কেউই পিছু হটেনি।

গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ডনবাস অঞ্চল নিয়ে সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু অঞ্চলটিকে বিচ্ছিন্ন করার ইঙ্গিত দেননি। তিনি স্পষ্ট করেছেন, আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা কিয়েভের অগ্রাধিকার।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুতিন ও জেলেনস্কির বৈঠক হিতে বিপরীত ডেকে আনতে পারে। যখন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে তখনই দুই নেতা বসতে পারেন।

ল্যাভরভ আবারও ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ, নাৎসিমুক্তকরণ এবং ভবিষ্যতে নিরপেক্ষতার দাবি করেছেন।

জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, নিরপেক্ষতার বিষয়টি গণভোটে তোলা যেতে পারে রুশ সেনাদের প্রত্যাহারের পর। কিয়েভ বুঝতে পারছে সব অঞ্চল শক্তি দিয়ে মুক্ত করা অসম্ভব। কিন্তু সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিয়ে কোনও সমঝোতা হতে পারে না। কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা আবশ্যক।

পেসকভ বলেছেন, আলোচনায় এখন পর্যন্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ অর্জন বা অগ্রগতি দেখছে না’ রাশিয়া। একই মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ভাদিম দেনিসেঙ্কোর কথাতেও।

ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি মনে করেন পুতিন মনে মনে একই ইউক্রেনকে দেখেন না, যা তারা দেখছেন। পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার অংশ মনে করেন। কিন্তু ৩০ বছর আগে যা ছিল তা এখনকার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

জেলেনস্কি বলেন, আমরা জয়ে বিশ্বাস করি। এর বাইরে কিছু বিশ্বাস করা অসম্ভব। আমরা অবশ্যই জিতবো। কারণ, এটি আমাদের বাড়ি, আমাদের মাটি, আমাদের স্বাধীনতা। জয়ের বিষয়টি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার রাশিয়ার আক্রমণে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এক কোটির বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। ৪০ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বিদেশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category