আজ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : সকাল ৭:৫৬

বার : শনিবার

ঋতু : গ্রীষ্মকাল

৫০ বছরেও স্বাধীন ইসি গড়ে ওঠেনি: বাংলাদেশ কংগ্রেস

৫০ বছরেও স্বাধীন ইসি গড়ে ওঠেনি: বাংলাদেশ কংগ্রেস

দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বাধীন-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ তুলেছে সর্বশেষ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কংগ্রেস। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে দলটি তাদের লিখিত প্রস্তাবে এমন অভিযোগ করে।

রবিবার (১৭ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে দলটির সংলাপ হয়।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আজও গড়ে ওঠেনি। ফলে দেশের প্রতিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নামে একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে এবং সাড়ে তিন বছর অনায়াসেই পার করে দিয়েছে। সাধারণ হিসাবে আর মাত্র দেড় বছর পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে যে পরিবেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংঘটিত হয়েছিল, তার সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি। সংসদের তথাকথিত বর্তমান বিরোধী দল বা অতীতে ক্ষমতাভোগী বড় কোনও দল সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের ওপর কোনও চাপ সৃষ্টি করছে না। তারা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বললেও রহস্যজনক কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে কোনও তাগিদ দেখাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, এই অব্যবস্থা ও অনিয়মের নির্বাচন তারাও চাচ্ছে।

ইয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও বিগত সাড়ে তিন বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোও চরম অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে। ফলে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে সাম্প্রতিক নির্বাচন ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।’

বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রস্তাবগুলো হচ্ছে-

১. ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সংশোধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত যাবতীয় কার্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জন্ম, মৃত্যু ও বয়সের ভিত্তিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্পন্ন করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে সরবরাহকৃত তথ্য অনুসারে জাতীয় ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে।

২. সব প্রকার নির্বাচন পরিচালিত হতে হবে নির্বাচন কমিশনের দ্বারা এবং নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে বাধ্য থাকবে। জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা/মহানগর নির্বাচন কর্মকর্তারা এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসার নিযুক্ত হবেন। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত থেকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।

৩. জাতীয় বাজেটের ০.০২% নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বরাদ্দ করতে হবে, যা নির্বাচন কমিশন দলগুলোর মধ্যে সমহারে বণ্টন করবে। রাজনৈতিক দলগুলো ওই অর্থ সমাজকল্যাণমূলক কাজ ও দল পরিচালনায় ব্যয় করবে, যার হিসাব বছর শেষে কমিশন বরাবর জমা প্রদান করতে হবে।

৪. নির্বাচনে সব প্রকার প্রচারণা হবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনা অনুসারে। প্রার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত মুদ্রণ ফি গ্রহণপূর্বক নির্বাচন কমিশন সব প্রার্থীর নাম ও ছবি সংবলিত পোস্টার মুদ্রণ করে প্রার্থীদের মধ্যে সমসংখ্যক পোস্টার বিতরণ করবে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে প্রার্থীরা ওই পোস্টার প্রদর্শন করবেন।

৫. ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর অবস্থান ও পরিচালনায় গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে এবং ভোট প্রদানের পর প্রতীকসহ মুদ্রিত টোকেন প্রদান পদ্ধতি চালু করতে হবে।

৬. জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস পূর্বে নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে এবং তফসিল ঘোষণার পর থেকে দেশের বিদ্যমান সরকার ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ বলে অভিহিত হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত যাবতীয় লোকবল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক মনোনীত একজন নির্বাচন কমিশনারের অধীনে এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বদলির ক্ষমতা এককভাবে আরেকজন নির্বাচন কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত থাকবে।

৭. যেকোনও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনুমোদিত বা নিবন্ধিত দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ সুযোগ প্রদান করতে হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারীদের মতামত ও প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা প্রদান করা যাবে না।

৮. নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো ও দলীয় সদস্যদের যেকোনও বেআইনি ও অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে ‘পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনাল’ ও ‘পলিটিক্যাল আপিলেট ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করতে হবে। পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনালে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর যেকোনও কমিটি বা সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা যাবে।

৯. নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য সৃষ্টি, রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন, জবাবদিহি, দায়িত্ববোধ, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নরোধ, পরমতসহিষ্ণুতা, দেশপ্রেম, মূল্যবোধ ও নেতৃত্বের বিকাশ, মতামত গ্রহণ এবং নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্যে দলগুলোর চেয়ারম্যান ও মহাসচিব (বা সমমানের পদধারী)-দের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের যেকোনও সময় দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category