আজ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : রাত ৯:০৪

বার : শনিবার

ঋতু : গ্রীষ্মকাল

প্রয়াণ দিনে স্মরণ কোথাও কেউ নেই: আছে বদি, দুলাভাই ও মামা

প্রয়াণ দিনে স্মরণ

কোথাও কেউ নেই: আছে বদি, দুলাভাই ও মামা

দেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন তিনি একুশের টগবগে যুবক। ওই সময়ে মঞ্চনাটক দিয়ে শুরু হয়েছিল তার অভিনয় জীবন। এরপর ধীরে ধীরে রেডিও, টেলিভিশন এবং সিনেমার পর্দায় উঠে এসেছে তার সাবলীল অভিনয় নৈপুণ্য। তুমুল জনপ্রিয়তা বা তারকা খ্যাতি হয়তো আসেনি, তবে নিজ চরিত্রে তিনি বিন্দুমাত্র অনুজ্জ্বল ছিলেন না।

তার নাম উচ্চারিত হলেই যে কয়টি চরিত্রের কথা উঁকি দেয় দর্শকের মনে, তার প্রথমটি হলো ‘বদি’। বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’-এর সেই হাস্যোজ্জ্বল বদি, যে ছিল বাকের ভাইয়ের বিশ্বস্ত সঙ্গী। সেই বদ বদি, যার মিথ্যা সাক্ষ্যে ফাঁসি হয় বাকের ভাইয়ের। যেই ফাঁসির বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে অব্দি নেমেছিল টিভি দর্শকরা।

১৯৯৫ সালে প্রচার হওয়া ‘নক্ষত্রের রাত’-এর ঘোর কি এখনও কেটেছে? একদমই না। হুমায়ূন আহমেদের অমর এই সৃষ্টিতে সবচেয়ে মজার চরিত্রটি তার দখলে। যে দুলাভাই কদিন পরই বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে চলে আসে শ্বশুরবাড়িতে! আর কখনও সংসার করবে না বলে হুংকার দেয়, আবার খানিক পরেই সব ভুলে বউয়ের আঁচলে ভালোবাসা খুঁজে নেয়। সেই দুলাভাই চরিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় এখনও গেঁথে আছে দর্শক হৃদয়ে।

টিভি পর্দার সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র ইতিহাসেও অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। দীর্ঘদিন ধরে এই অনুষ্ঠানের নাটিকায় ‘মামা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কুসংস্কার, দুর্নীতি আর অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তার যুক্তিগুলো, সুন্দর পথে এগিয়ে যাবার পরামর্শগুলো যেন এখনও দর্শকের কানে বাজে।

বদি, দুলাভাই, মামা’র মতো এমন আরও অসংখ্য স্মরণীয় চরিত্রকে জীবন্ত করে গেছেন তিনি। নাম না বললেও এতক্ষণে সবাই তাকে চিনে ফেলেছেন। হ্যাঁ, গুণী অভিনেতা আব্দুল কাদেরের কথাই বলা হচ্ছে।

আজ সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) তার চলে যাবার দিন। ২০২০ সালের এই দিনে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তবে চলে গিয়েও তিনি তার অভিনীত চরিত্রগুলো হয়ে বেঁচে আছেন, ঘুরে বেড়ান ঢাকাই শোবিজের অলিগলিতে।

kader

আব্দুল কাদেরআব্দুল কাদেরের জন্ম ১৯৫১ সালের ১ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষাজীবনেই জড়িয়ে পড়েন অভিনয়ে। তবে পিছিয়ে থাকেননি চাকরির দিকেও। শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করেছিলেন চাকরিজীবন। এরপর বিজ্ঞাপনী সংস্থায় সফল ক্যারিয়ার। সবশেষে বহুজাতিক কোম্পানি ‘বাটা’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাটিয়েছেন অনেক বছর।

মঞ্চে আব্দুল কাদের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘স্পর্ধা’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’সহ বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি টিভি নাটক হলো, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘সবুজ সাথী’, ‘তিন টেক্কা’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘হারানো সুর’, ‘সুন্দরপুর কতদূর’ ইত্যাদি।

বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে মোটে দুটি সিনেমায় কাজ করেছিলেন আব্দুল কাদের। এগুলো হলো ‘রং নাম্বার’ ও ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’।

আব্দুল কাদেরের দুই ছেলেমেয়ের কেউই অভিনয়ে আসেননি। তবে তার নাতনি সিমরিন লুবাবা শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করছে শোবিজে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category