আজ ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : দুপুর ২:৫৬

বার : বৃহস্পতিবার

ঋতু : গ্রীষ্মকাল

নতুন বছর হবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণার

নতুন বছর হবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণার

নতুন বছরে আওয়ামী লীগের প্রাধান্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ বছর হবে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনি প্রস্তুতি ও প্রচারণার বছর। বছরজুড়েই সরকারের উন্নয়ন প্রচারণা নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকবে দলটি। পাশাপাশি বিরোধী দলের অপ্রচারের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করবে। বিরোধী দলের কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখবে। দলটির সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরজুড়েই নির্বাচনি প্রচারণা কেন্দ্রিক কর্মসূচি থাকবে আওয়ামী লীগের। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন দেশের বিভিন্ন স্থানে যাবেন। এ সময় দলের উদ্যোগে জনসভার আয়োজন করে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাবেন। ইতোমধ্যে তিনি যশোর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সফর করেছেন। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী সফরে যাবেন। পর্যায়ক্রমে বছরব্যাপী দেশের বিভাগীয় শহর ও বড় বড় জেলাগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর সফর অব্যাহত থাকবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দলের নেতারা জানান, সদ্য অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দলের নেতৃত্বে খুব একটা পরিবর্তন না হলেও নতুন কমিটি নতুন বছরে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করবে। নির্বাচনের আগে কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন না আনার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করছেন তারা। এক্ষেত্রে কমিটির ‘হানিমুন পিরিয়ডের’ প্রয়োজন পড়বে না। অবশ্য পুরনোদের দিয়ে কমিটি গঠনের কারণ ব্যাখ্যা করে ইতোমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচন, বিএনপির সরকার হটানোর আন্দোলনের ঘোষণা এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ দেশীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলে অভিজ্ঞদের রাখা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর শিগগিরই নতুন কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় আগামী সংসদ নির্বাচন ও নতুন বছরের কর্মসূচি নিয়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, বিদায়ী বছরে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু, দেশের ইতিহাসে প্রথম চালু হওয়া মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন করেছেন একই দিনে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ১০০ ব্রিজের নির্মাণকাজ ও ১০০ সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণকাজের উদ্বোধন করে রেকর্ড করেছেন। নতুন বছরে তিনি মেট্রোরেলের মতিঝিল পর্যন্ত চালু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দর-গাজীপুর বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের ইতিহাসে প্রথম নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগসহ সরকারের উন্নয়নমূলক বেশ কিছু কাজের উদ্বোধন হবে নতুন বছরে। দলীয়ভাবে তারা সরকারের এসব উন্নয়নের বার্তা জনগণের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেবে। নির্বাচনে সুফল পেতে এসব উন্নয়নমূলক কাজের প্রচারণার মাধ্যমে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে।

এছাড়া বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৬টিসহ নতুন বছরের শুরুতে ৭টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। এসব নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলকে চাঙা করে তুলবে বলে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণার মূল কারিগর হবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী। এ লক্ষ্যে বিদায়ী বছরের এই ঘোষণা বাস্তবায়নে নতুন বছরে সেভাবে এগোবো। নেতাকর্মীদের স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত করবো।

নির্বাচনেই নতুন বছরের মূল ফোকাস থাকবে উল্লেখ করে আমিনুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিশাল উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে তুলে ধরে জনগণকে নৌকায় ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের মুখোশ উন্মোচন করে তাদের অপপ্রচারের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করাই হবে নতুন বছরে আমাদের লক্ষ্য। এছাড়া সরকারের উন্নয়নে মানুষ যে সুফল পাচ্ছে তা জনগণকে অবহিত করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ অলআউট খেলবে।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল বলেন,  নতুন বছরে নতুন কমিটি আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে ঢেলে সাজাবে। আওয়ামী  লীগের ভিত্তি শক্ত করবে। আওয়ামী লীগের পক্ষে রায় দিয়ে জনগণ কখনও প্রতারিত হয়নি এ বিষয়টি জনগণকে বুঝাতে চেষ্টা করবো। দেশের জনগণও আমাদের কথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। এর মাধ্যমে আমাদের মুল লক্ষ্য হবে ২০২৪-এর শুরুতে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।

বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি যার নির্দেশে আন্দোলন করছে জাতির প্রতি তার কোনও দায়বদ্ধতা নেই। তারা আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। দেশের জনগণ ভালোভাবে উপলব্ধি করে বলেই তাদের আন্দোলনে সাড়া দেবে না। তারা শেখ হাসিনার সাথেই থাকবে। এজন্য বিএনপির হাঁকডাক আন্দোলন নিয়ে দেশের জনগণ যেমন ভাবে না, আওয়ামী লীগও ভাবে না।

পদ্মা সেতু মেট্রোরেল, একদিনে একশ ব্রিজ-সড়ক উদ্বোধনের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২২ সাল ছিল উন্নয়নের মাইলফলক। নতুন বছরে কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কয়লাভিত্তিক একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন হবে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই শেখ হাসিনা এসব উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় বসানো। ২০২৩ সালের কর্মযজ্ঞ হবে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের। এজন্য দল গোছানো, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা ও শেখ হাসিনার উন্নয়ন জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া- এসবই হবে নতুন বছরে আমাদের দায়িত্ব।

বিএনপি-জামাত সরকার হটানোর নামে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে মাঠেই তা মোকাবিলা করা হবে বলে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক জানান।

সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ২০২৪ সালের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন বছর হবে আমাদের প্রস্তুতির বছর। আমাদের সময়ে যে উন্নয়নগুলো হয়েছে সেগুলো বছরব্যাপী তৃণমূলে গিয়ে মানুষকে জানাবো। এ বছর নতুন নতুন যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন হবে সেগুলো তুলে ধরবো। পাশাপাশি আমরা বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরবো। তারা যে কখনও গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাস করে না, তার প্রমাণগুলো আমরা তুলে ধরবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category