শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আলাল খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি ফেরতের দাবি জানালেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন কুবিতে নতুন রাজনৈতিক দল আসা প্রয়োজন ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে: সারজিস আপিল শুনানি শেষ, রায় যেকোনো দিন : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কেনিয়ার চুক্তি বাতিল যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে পরোয়ানার পর, বাংলাদেশ কী করবে? মোহিনীর সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন,এআর রহমানের বিচ্ছেদ; কি বলছেন পুত্র-কন্যা? শেয়ারে ‘ধস’ গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মামলার পরেই বোমা হামলার পরিকল্পনা নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে: ফ্লোরিডায় গৃহহীন ব্যক্তি গ্রেফতার বিতর্কিত আউট নিয়ে প্রশ্ন আর সমালোচনার ঝড় রাহুলের যেভাবে ফ্রিজে রাখা যায় রসুন

তিন ব্যাংক রপ্তানির ৪৯ কোটি ডলার সরিয়ে নেয়

bornomalanews
  • Update Time : রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৪ Time View

রপ্তানি আয়ের ৪৯ কোটি ডলার বা ৫৮৮০ কোটি টাকা ‘কেয়া কসমেটিকস লি. কোম্পানির অ্যাকাউন্টে (বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে) জমা না করার কারণ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পূবালী, সাউথ ইস্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনে সম্প্রতি তদন্তের আহ্বান জানায় ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিটি। অর্থ উপদেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে পৃথক চিঠির মাধ্যমে এ অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার কারণ জানাতে তিন ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

যদিও সরকারের তালিকায় কেয়া কসমেটিকস লি. একটি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান যুগান্তরকে জানান, ব্যাংকের ভুল হিসাবের কারণে খেলাপির খাতায় নাম উঠেছে তার প্রতিষ্ঠানের। অথচ তিনটি ব্যাংকের কাছে আমার পাওনা পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। খেলাপি হিসাবে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের কাছে ব্যাংকের পাওনা হচ্ছে ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

ব্যাংক হিসাবে রপ্তানি আয় মার্কিন ডলার স্থানান্তর না হওয়া প্রসঙ্গে অভিযোগ জমা পড়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি)। এছাড়া এটি নিষ্পত্তি করতে ইতোমধ্যে ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের পক্ষ থেকে তিনটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘটনার নিষ্পত্তি হয়নি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে বিষয়টি সামনে আসে। কেয়া কসমেটিকসের পক্ষ থেকে অর্থ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের নিট শিপিং অ্যান্ড ইয়ার্ন বিভাগ থেকে বিদেশে পণ্য রপ্তানির পর সে আয় দেশে আসে। এরমধ্যে ১৬ কোটি ৭১ লাখ (১৬৭.১৪ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার পূবালী ব্যাংক আদায় করেছে। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রায় এ অর্থ আদায় করলেও ওই ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত অ্যাকাউন্টে ডলার স্থানান্তর করা হয়নি। একইভাবে রপ্তানির বিপরীতে ১১১ কোটি ১৮ লাখ (১১১১.৮৬ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আদায় করেছে সাউথইস্ট ব্যাংক। বিপরীতে ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছে মাত্র ৮৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলার (৮৫৪.৩৯ মিলিয়ন) ডলার। কিন্তু ২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়নি। চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই সময়ে ৮ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় আদায় করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো ডলার কেয়া কসমেটিকসের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূবালী ব্যাংকের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর মতিঝিল প্রিন্সিপাল শাখায়। যোগাযোগ করা হলে শাখার জেনারেল ম্যানেজার সুলতানা শরিফুন নাহার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তার নির্দেশে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার অ্যান্ড ইনচার্জ (লোন অ্যান্ড অ্যাডভান্স) খান মো. জাবেদ জাফর যুগান্তরকে জানান, কেয়া কসমেটিকস লি. কোম্পানির একটি চিঠি আমরাও পেয়েছি। এটি নিয়ে কাজ চলছে। তবে প্রতিষ্ঠানের দাবি যৌক্তিক নয়। ব্যাংক প্রতিটি খাতের হিসাব রেখেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৫০০ কোটি টাকার একটি মামলা চলমান আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেয়া কসমেটিকস লি.র চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান শনিবার যুগান্তরকে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য চিঠি দিয়েছি। গভর্নর দপ্তর থেকে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার্স সার্ভিস বিভাগে তদন্তের জন্য দিয়েছে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পূবালী ব্যাংক আমার ১৬ কোটি ডলার আদায় করেছে। ব্যাংক ঋণের টাকা আমার কাছে পাওনা থাকলে সেটি অবশ্য পরিশোধ করব। কিন্তু এর আগেই আমার রপ্তানি আয়ের ডলার আমার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ড্যাশবোর্ডে এখনও আমার কাছ থেকে নেওয়া ১৩ কোটি ডলার দৃশ্যমান আছে। তিনি অভিযোগ করেন, আমি এই টাকা দাবি করলে বিএনপি করার অভিযোগ এনে ২০১২ সালে আমার ব্যবসা বন্ধ করে দেয় ব্যাংক। আমার বৈদেশিক মুদ্রা পর্যাপ্ত থাকার পর ব্যাংক ফোর্স ঋণ করে সেটিকে টার্ম লোনে ফেলে দিয়ে ঋণগ্রহীতা বানিয়ে দেয়। এরপর খেলাপি বানিয়ে দেয় আমাকে। আমি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলাও দিয়েছিলাম।

জানা গেছে, পূবালী ব্যাংক ছাড়াও সাউথইস্ট ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব চেয়ে ২০১৯ সালে অভিযোগ করেছিল কেয়া কসমেটিকস কোম্পানি। ওই সময় হিসাব চূড়ান্ত করতে উভয় পক্ষ (ব্যাংক ও কোম্পানি) সম্মত হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনোনীত একটি অডিট ফার্ম নিয়োগের ব্যাপারে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘হুদাভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং’ নামে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু পাবলিক লি. কোম্পানি হওয়ায় হুদাভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি অনেক আগেই কেয়া কসমেটিকস লি. এবং ব্যাংকের অর্থাৎ উভয় প্রতিষ্ঠানের অডিট করেছিল। ফলে এই প্রতিষ্ঠানের অডিট কার্যক্রমের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলে আপত্তি দেয় কেয়া কসমেটিকস। পরে ব্যাংকের পক্ষ থেকে হুদাভাসি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে একটি অডিট সম্পন্ন করে। কিন্তু পরে ইসলাম আফতাবুল কামরুল অ্যান্ড কোং নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয় কেয়া কসমেটিকস লি.। সেটি পরে চিঠির মাধ্যমে ব্যাংককে অবহিত করা হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ইসলাম আফতাবুল কামরুল অ্যান্ড কোং নিরীক্ষা রিপোর্ট ব্যাংকের বিপক্ষে চলে গেলে তা গ্রহণ করেনি। পরে আফতাবুলের রিপোর্ট না নেওয়া এবং হুদাভাসির রিপোর্ট চাওয়ার পরও না দেওয়া এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে হুদাভাসি ও আফতাব এ দুটি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট ফের নিরীক্ষার জন্য তৃতীয় অডিটর প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে। বর্তমান আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। কিন্তু অডিট করতে নির্দিষ্ট অফিসার ও হিসাব ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তালিকায় নাম রয়েছে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের। ব্যাংকের দাবি, কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 bornomalanews24.com
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102