বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের প্রায় ২৯ শতাংশ কিনেছে শীর্ষ দশটি বহুজাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং ক্রেতাদের তথ্য পর্যালোচনা করে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা সুইডেনের এইচঅ্যান্ডএম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে ২৫৯ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। প্রায় দুই শতাধিক কারখানা থেকে এই পোশাক সংগ্রহ করেছে তারা। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৪২টি চালানে নবজাতক থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের জন্য পোশাক বিদেশে পাঠানো হয়েছে।
১৯৪৭ সালে যাত্রা শুরু করা এইচঅ্যান্ডএম বর্তমানে বিশ্বের ৪৪টি দেশে ৪ হাজার ২৯৮টি বিক্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করছে। বাংলাদেশি পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে পোল্যান্ড, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রে।
এইচঅ্যান্ডএমের গ্লোবাল কমিউনিকেশনের প্রেস অফিসার অলবিন নরডিন বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। ভবিষ্যতে আমরা এ দেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাই।”
বাংলাদেশি পোশাকের দ্বিতীয় শীর্ষ ক্রেতা স্পেনের ইন্ডিটেক্স, যার প্রধান ব্র্যান্ড জারা। গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ২১৮ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। এর বেশিরভাগই স্পেনসহ বিশ্বের ১৩টি দেশে পাঠানো হয়েছে। ইন্ডিটেক্স বাংলাদেশি ২৫০টি কারখানা থেকে অন্তর্বাস থেকে শুরু করে ওভারকোট পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পোশাক সংগ্রহ করেছে।
বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১২ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে আয়ারল্যান্ডের প্রাইমার্ক। প্রতিষ্ঠানটি সাশ্রয়ী দামে পোশাক ক্রয়ে পরিচিত। গড়ে প্রতি পিস পোশাক কিনেছে ৩ দশমিক ৩ ডলারে।
প্রাইমার্কের বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানান, “আমাদের কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে পোশাক সংগ্রহ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।”
জাপানের ইউনিক্লো বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে দামি পোশাক কিনেছে। প্রতি পিসের গড় দাম ৫ দশমিক ৪১ ডলার। ১৩ কোটি ২১ লাখ পিস পোশাক সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
যুক্তরাজ্যের মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার (এমঅ্যান্ডএস) ৭৮ কোটি ডলারের পোশাক কিনে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। নেদারল্যান্ডসের সিঅ্যান্ডএ ও ডেনমার্কের বেস্টসেলার যথাক্রমে ৭২ কোটি ডলার এবং ৭৯ কোটি ডলারের পোশাক সংগ্রহ করেছে।
যুক্তরাজ্যের নেক্সট, পোল্যান্ডের এলপিপি ও পেপকো এবং জার্মানির অ্যাডিডাসও বাংলাদেশি পোশাকের উল্লেখযোগ্য ক্রেতা। বিশেষ করে বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে হলেও উচ্চ মূল্যে পোশাক কিনছে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের গুণগত মান ও সাশ্রয়ী দামের জন্য বৈশ্বিক ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “শীর্ষ ক্রেতাদের উপস্থিতি আমাদের পোশাক খাতকে শক্তিশালী করছে। এটি ব্র্যান্ডিংয়ের সুযোগ এনে দিয়েছে। তৈরি পোশাক ছাড়াও এই ক্রেতাদের কাছে অন্যান্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও বড় সুযোগ রয়েছে।”
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের এমন অগ্রগতি বৈশ্বিক বাজারে এ দেশের অবস্থানকে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।