জামায়াতে ইসলামী বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, তাদের রাজনীতি বরাবরই ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, যা দেশের জনগণ স্বতঃসিদ্ধভাবে গ্রহণ করেছে। এই অবস্থানই হয়তো রিজভীর অসন্তোষের কারণ।
রোববার রিজভীর বক্তব্যের পর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেন, রিজভীর মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রিজভী জাতীয়তাবাদী রিকশা ভ্যান অটোশ্রমিক দলের এক কর্মসূচি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ। কারা পায়ের রগ কাটে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে এবং একাত্তরের বিরোধিতা করেছিল, তা জনগণ জানে।”
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়, “রগ কাটা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি জামায়াত কখনোই করেনি। এসব অভিযোগ বহু পুরোনো এবং জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে রিজভী আসলে কী অর্জন করতে চান, তা জনগণের কাছে অস্পষ্ট।”
জামায়াত আরও দাবি করে, তারা ইসলামিক আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে এবং কখনোই মোনাফেকির আশ্রয় নেয়নি। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে পাশ কাটিয়ে ভিন্নমতের লোকদের সঙ্গে ঐক্য করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তা কি জাতির সঙ্গে মোনাফেকি ছিল না?”
বিবৃতিতে রিজভীর ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত’ বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রিজভীর উদ্দেশে বলা হয়, “ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে জামায়াতকে অভিযুক্ত করার আগে তার নিজের দলের কার্যক্রম আত্মসমালোচনার আওতায় আনা উচিত। জনগণ ভালো করেই জানে, কারা দলীয় টিম নিয়ে ভারত সফর করেছে এবং ভারতের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে।”
জামায়াতের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তাদের রাজনীতি বরাবরই ভারতের আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। “আমাদের এই ভূমিকা গোটা জাতি গ্রহণ করেছে। এই সত্যই রিজভীর অসন্তোষের মূল কারণ,” উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
জামায়াত বিভ্রান্তিকর ও অপবাদমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেছে, “দেশের মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জামায়াত আপসহীনভাবে লড়াই চালিয়ে যাবে।”
এই পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে আস্থার সংকটের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে উভয় দলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।