বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রাখার পরও দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য ১২টি আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংককে সাড়ে ৫২ হাজার কোটি টাকার সহায়তা প্রদান করেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ধাপে ধাপে এই অর্থ সরবরাহ করা হয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতের সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই সহায়তা ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের আমানত পরিশোধের সুবিধার্থে ১০টি ব্যাংককে ‘ডিমান্ড লোন’ হিসেবে ৩৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ৯টি ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঘাটতির অতিরিক্ত ১৯ হাজার কোটি টাকা চাহিদা ঋণে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যা তাদের আর্থিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছে। এই সহায়তাপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (বিসিবিএল), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বেসিক ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক। বিশেষভাবে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সর্বাধিক সহায়তা পেয়ে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার সুবিধা লাভ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক ‘খুব শিগগিরই’ একীভূত হওয়ার পরিকল্পনা করছে, যদিও দেশের জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। তিনি উল্লেখ করেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং আশা করা হচ্ছে যে পরবর্তী সরকার এটি অব্যাহত রাখবে। গভর্নর আরও জানান, ইতোমধ্যে এই ব্যাংকগুলোতে তারল্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ‘বিভিন্ন অনিয়ম এবং ঋণ জালিয়াতির’ কারণে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত ৬টি প্রতিষ্ঠান জুলাইয়ের মধ্যে একীভূত হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই ব্যাংকগুলো সাময়িকভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে’ এবং পুনর্গঠনের পর তাদের শেয়ার সরকারি এবং আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে স্থানান্তর করা হবে। এই আর্থিক সহায়তা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।