বাংলাদেশের সেতু অবকাঠামোতে যুগান্তকারী এক প্রযুক্তি হিসেবে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে পদ্মা সেতুতে এই পদ্ধতি চালু হবে, যা দেশের টোল আদায়ের পদ্ধতিতে আনবে একটি বিপ্লবী পরিবর্তন। ইটিসি ব্যবস্থায় যানবাহনের নম্বর শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় করা হবে, ফলে ম্যানুয়াল টোল আদায়ের ফলে হওয়া ভিড়, সময় নষ্ট এবং যানজটের সমস্যা দূর হবে। স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরার মাধ্যমে যানবাহন শনাক্ত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গেট খুলে যাবে। এতে কর্মঘণ্টা ও জ্বালানি খরচ সাশ্রয় হবে। এছাড়া, এই পদ্ধতিতে নগদ টোল আদায়ের পরিবর্তে গাড়ির উইন্ড শিল্ডে আরএফআইডি ট্যাগ সংযুক্ত করা হবে। টোল প্লাজায় স্থাপিত ইটিসি ডিভাইসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় হবে। এই ব্যবস্থা চালু করতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে যানবাহন নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু ব্যবহারকারীরা এখন থেকে সাতটি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ও ৩৬টি ব্যাংকের অ্যাপের মাধ্যমে আগাম টোল পরিশোধ করতে পারবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে এবং ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম একপের সহযোগিতায় ইটিসি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, এবং এর হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, অ্যাপ ইন্টিগ্রেশন ও এপিআই সংযোগের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই সিস্টেম চালুর ফলে পদ্মা সেতুর ব্যবহার যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি রাজস্ব আয়ও বাড়বে। ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা টোল আদায় করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধে সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে, ধাপে ধাপে যমুনা সেতু, মুক্তারপুর সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ অন্যান্য সেতু ও টানেলে ইটিসি ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, এবং ভিসা ও মাস্টারকার্ডসহ আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমও এই ব্যবস্থায় সংযুক্ত করা হবে।