সোমবার দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা গুজব জনমনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি, অন্তর্বর্তী সরকারকে বাদ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং সেনাপ্রধানের পদত্যাগ—এই তিনটি গুজব ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে এসবের বাইরে আরও নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে উচ্চ আদালতের ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশও ছিল অন্যতম। গুজব এমন এক সামাজিক ভাইরাস, যা একবার ছড়িয়ে পড়লে ডালপালা গজিয়ে আরও নতুন গুজবের জন্ম দেয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রেক্ষাপটে গুজবের মাত্রা বেড়ে যায়। গত বছরের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশে যে বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা গুজব সৃষ্টির অনুকূল আবহ তৈরি করেছে। গুজবের পালে হাওয়া লাগলেও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে দেওয়া বিবৃতি জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনে। পরে চেম্বার জজ আদালতের আদেশে ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের বিভ্রান্তি কেটে যায়। গুজব ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। মুহূর্তেই কোটি কোটি মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে, যার পেছনে অনেক সময় থাকে হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করার নানা ষড়যন্ত্র চলছে বলে তথ্য রয়েছে। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পলাতক নেতারা বিদেশে বসে এসব তৎপরতায় যুক্ত বলেও অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি দেখা গেছে, জনপ্রিয় গণমাধ্যম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার করে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে তা আরও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ, গুজব শুধু বিভ্রান্তিই সৃষ্টি করে না, অনেক সময় তা গুরুতর সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বাস্তবতায় গুজব সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যেসব কথা বা আচরণে গুজব সৃষ্টি হতে পারে, সেসব থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, যাতে সরকারের ভেতর সমন্বয়হীনতার বার্তা না যায়। রাজনৈতিক নেতাদেরও গুজব প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের সুফল রক্ষা করতে হলে গুজবের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ, বিভ্রান্তির সুযোগে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্র সফল হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা জাতি। তাই এখনই সময়—গুজব সম্পর্কে সাবধান হওয়ার।