আজ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : সন্ধ্যা ৬:১৫

বার : শনিবার

ঋতু : গ্রীষ্মকাল

পুড়িয়ে মানুষ হত্যা: আওয়ামী লীগেরই সন্ত্রাসী রাজনীতির চরিত্র

পুড়িয়ে মানুষ হত্যা: আওয়ামী লীগেরই সন্ত্রাসী রাজনীতির চরিত্র


আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা, সাধারণ মানুষ মেরে পলিটিক্যাল অপজিশনকে ব্লেম দেওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজ দলের মানুষ হত্যা করে বিরোধী দলকে ব্লেম দেওয়া আওয়ামী লীগের পুরানো কালচার

আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা, সাধারণ মানুষ মেরে পলিটিক্যাল অপজিশনকে ব্লেম দেওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজ দলের মানুষ হত্যা করে বিরোধী দলকে ব্লেম দেওয়া আওয়ামী লীগের পুরানো কালচার

নিজস্ব প্রতিনিধি

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চলছিল, তখন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ তার নিজস্ব বিহঙ্গ পরিবহনে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে ১১ জনকে হত্যা করেছিলেন। আওয়ামী লীগ থেকে দুইবার মনোনীত এমপি, মেহেন্দিগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি, বরিশাল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মইদুল ইসলাম চাঞ্চল্যকর এই তথ্য ফাঁস করেছিলেন।

অথচ সেই ১১ জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় মামলার দায় মাথায় নিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপির অনেক নেতা।

ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ’ এর সম্পাদক নুরুল কবির ২০১৫ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এত বাস থাকতে কেন শুধু বিহঙ্গ বাসেই আগুন লাগে?’ নুরুল কবির ওই সময় তিনিটি আগুনের ঘটনার উল্লেখ করে দেখান যে প্রতিটিতেই জড়িত বিহঙ্গ পরিবহন।

একই বছর ঢাকা নরসিংদী রোডের বিআরটিসি রহস্যজনকভাবে আজিমপুরে গিয়ে আগুনের শিকার হয়। এনিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।

এসব প্রশ্নের জবাব আজ অবধি দিতে পারেনি আওয়ামী লীগের কোনো নেতা। সুতরাং, এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিপদে ফেলতে ২০১৫ সালের মতো একই কায়দায় ২০২৩ সালেও কারা, কীভাবে বাসে আগুন লাগাচ্ছে।

এর আগে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন ২০০৫ সালে ঢাকার পুরাতন শেরাটন হোটেলের সামনে দোতলা বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিল ৫ জনকে। এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ পরিবারের শেখ সেলিম। ১/১১-এর জরুরী আইনের সরকারের সময় গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে তিনি এই দায় স্বীকার করেছিলেন। তার এই স্বীকারোক্তির ভিডিও এখনো ইউটিউবে খুঁজলে পাওয়া যায়।

প্রকৃতপক্ষে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা, সাধারণ মানুষ মেরে পলিটিক্যাল অপজিশনকে ব্লেম দেওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজ দলের মানুষ হত্যা করে বিরোধী দলকে ব্লেম দেওয়া আওয়ামী লীগের পুরানো কালচার।

নিচে এমন কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলোঃ

(১) ২০০৪ সালের ৪ঠা জুন বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের হরতালপূর্ব এক নজিরবিহীন সন্ত্রাসে শিশুসহ কমপক্ষে ১০ ব্যক্তি প্রাণ হারায়। নগরীর ঢাকা শেরাটন হোটেলের সামনে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের পিকেটাররা রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ১৫ যাত্রী মারাত্মকভাবে আগুনে দগ্ধ হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় শফিকুল ইসলাম কালু নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবীর নানক, মির্জা আজম ও সাঈদ খোকনসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার নাম প্রকাশ করেছিলেন। এরপর আওয়ামী সময় পরিক্রমায় সেই ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়।

(২) ২০০৪ সালের ২২শে আগস্ট ভৈরবে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা একটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় একজন যাত্রী আগুনে পুড়ে মারা যান। ট্রেনটির ১২টি কম্পার্টমেন্ট পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে ট্রেনটি মেরামতের জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়তলির কারখানায় নেওয়া হয়। কারখানার কর্মীরা ২৪ আগস্ট ট্রেনের ভিতর পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া আরো একজনের লাশ খুঁজে পায়। সেই ঘটনাও ধামাচাপা দেওয়া হয়।

(৩) ২০০২ সালের মার্চ মাস থেকে ২০০৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়ে রাজধানীসহ দেশজুড়ে হরতাল-সন্ত্রাস নিয়ে পরিচালিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো একটি দৈনিক পত্রিকা। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছিলো, ‘৫১টি বিআরটিসি বাস ওই তিন বছরে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ৫১ বাসের মধ্যে ২০টিতে হরতাল আহবানকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়’।

উপরের তিনটি ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আগুন সন্ত্রাস আওয়ামী লীগের পুরাতন এবং চিরাচরিত সন্ত্রাস। স্বাধীন বাংলাদেশে এরাই প্রথম গান পাউডারের প্রয়োগ করে মানুষ হত্যা করে বিএনপিকে পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যার ব্লেম দেয়।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা শত শত বাস জ্বালিয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা হয়। যে মামলার একটি ছিল ২০০৪ সালের ৪ জুন তারিখে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে আগুন দিয়ে ১১ যাত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায়।

২০২৩ সালে এসেও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা পুরনো কূটকৌশল ব্যবহার করে দলীয় নেতা-কর্মী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের ব্যবহার করে আগুন-সন্ত্রাস চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ওপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category