বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন

৬১% জাপানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী

bornomalanews
  • Update Time : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১২ Time View

বিনিয়োগ সম্প্রসারণে জাপানি উদ্যোক্তাদের আগ্রহের তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশগুলোর একটি এখন বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বিনিয়োগ থাকা জাপানি প্রতিষ্ঠানের ৬১ শতাংশের বেশি এখানকার ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়। আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
‘বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ এবং প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন অভিমত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) জরিপ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। হোটেল শেরাটন ঢাকায় ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই), জেট্রো, জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশেন ইন ঢাকা (জেসিআইএডি) ও এইচএসবিসি ব্যাংক যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশে জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউজি আনন্দ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাঁচটি বড় সম্ভাবনা এবং সাতটি প্রতিবন্ধকতার কথা ওঠে এসেছে। এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলে বিদেশি বিনিয়োগ টানার বড় সুযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ জরিপে ৬১ দশমিক ২ শতাংশ জাপানি উদ্যোক্তা বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। অবশ্য এর আগের জরিপের তুলনায় এ হার ১০ দশমিক ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। দুই বছর আগের সে জরিপে এ হার ছিল ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ।
জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ জাপানি প্রতিষ্ঠান আগের ব্যবসার কোনো ধরনের সংকোচনের কথা চিন্তা করছে না। সাড়ে ৩ শতাংশ কোম্পানি বিনিয়োগ সংকোচন করেছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ থেকে অন্য কোনো দেশে বিনিয়োগ সরিয়ে নেয়নি। অন্য যেসব দেশে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে, সেখান থেকে কম-বেশি বিনিয়োগ সরিয়ে নিয়েছেন জাপানি উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫০টি জাপানি কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। ২০০৮ সালে থেকে প্রতিবছর এ হার বাড়ছে।
জরিপে দেখা গেছে, এ দেশের ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অসন্তুষ্ট। ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ কিছুটা অসন্তুষ্ট। অন্যদিকে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান খুব সন্তুষ্ট। ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মোটামুটি সন্তুষ্ট।

বিনিয়োগে যেসব ঝুঁকি
জরিপে জাপানি উদ্যোক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি হচ্ছে– আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিনিয়োগ অনুমতি ও নিবন্ধন সনদ পেতে সময়ক্ষেপণ, জটিল কর প্রক্রিয়া, অস্বচ্ছ ও মানহীন আইনি ব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও স্থানীয় সরকারের অস্বচ্ছ নীতি ব্যবস্থাপনা।
বিনিয়োগের এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন জাপানি উদ্যোক্তারা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে– করকাঠোমো পর্যালোচনা, বিনিয়োগ-সংক্রান্ত প্রশাসনিক কাজে গতি আনা, দুর্নীতি কমানো, ভিসা ও কাজের অনুমতি প্রক্রিয়া সহজ করা, নীতির ধারাবাহিকতা, বৈদেশিক মুদ্রার নিয়ন্ত্রক কাঠামো শিথিল করা, সরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কার্যকর করা।
বিনিয়োগে ৫ সুবিধা
জরিপে জাপানি উদ্যোক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে অনেক ঝুঁকি যেমন রয়েছে, তেমনি অনেক সুবিধাও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ৫ সুবিধা হচ্ছে– স্বস্তা শ্রম, জিডিপির প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, স্থানীয়ভাবে কর্মী নিয়োগের সুবিধা, জমির সহজপ্রাপ্যতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা। এ ছাড়া স্থানীয় পণ্যও সংগ্রহ করা যায় তুলনামূলক সস্তায়। এসব সুবিধায় বাংলাদেশে উৎপাদন ব্যয় জাপানের তুলনায় ৬০ শতাংশ কম।

সেমিনারে বিনিয়োগ উন্নয়ন বিষয়ে জাইকার পক্ষ থেকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার বাংলাদেশ অফিসের প্রধান প্রতিনিধি তোমোহাইদ ইসিগুসি। এতে ব্যবসার নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা ওঠে আসে। ব্যবসায় বিনিয়োগের নানা সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, শুল্ক ও লজিস্টিকসে বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ আর সস্তা শ্রমের জন্য বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চায় না। সস্তা শ্রম আর জটিল বিনিয়োগ পরিবেশের বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় সরকার। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মুহাম্মদ বিন হারুন বলেন, বিডার সেবা উন্নয়নে টাস্কফোর্স করা হয়েছে। বিনিয়োগে বাধা দূর করতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য বিডায় আসুন। আর কোথাও যেতে হবে না। বিডা বাকি কাজ সমন্বয় করবে।
ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, তিন কারণে খুব দ্রুতই প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এগুলো হচ্ছে– নির্বাচনের চাপ, এলডিসি থেকে উত্তরণ ও অন্য দেশের বিনিয়োগে আগ্রহ। বাংলাদেশে সংস্কারের এখনই উপযুক্ত সময়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 bornomalanews24.com
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102