বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন

ভারতের মুসলিমরা কেন ওয়াকফ আইন সংশোধনের বিরোধিতা করছে ?

bornomalanews
  • Update Time : শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১০ Time View

ওয়াকফ বোর্ডগুলোতে যে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা, সে বিষয়ে মুসলিম গোষ্ঠীগুলো একমত। বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে দখলদারদের সঙ্গে যোগসাজশে ওয়াকফ জমি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

ভারতে মুসলিমদের দান করা সম্পত্তি, অর্থাৎ ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা গঠিত কয়েক; দশকের পুরনো একটি আইন সংশোধন করার উদ্যোগে দেশটির মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, আইনটি সংশোধনে ভারতের পার্লামেন্টে যে নতুন বিল আনা হচ্ছে তাতে ৪০টির বেশি সংশোধনীর কথা বলা হয়েছে।

পার্লামেন্টের সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি যৌথ কমিটির প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ চলতি অধিবেশনেই বিলটি তোলার আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই কমিটি এখন তাদের সুপারিশ জমা দিতে আরও সময় চেয়েছে।

ভারতে মসজিদ, মাদ্রাসা, আশ্রয়কেন্দ্র এবং হাজার হাজার একর ওয়াকফ জমির ব্যবস্থাপনা একটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার বলছে, ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির মূলোৎপাটন এবং আইনটির সংস্কারে মুসলিমদের দাবির প্রেক্ষিতেই আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

তবে কয়েকটি মুসলিম গোষ্ঠী এবং বিরোধী দল এসব সংশোধনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করতে মোদীর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে।

বিলটি প্রথম অগাস্টে পার্লামেন্টে তোলা হলেও পরে প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

ওয়াকফ কি?

ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, মুসলিমরা নিজেদের সম্প্রদায়ের মানুষের কল্যাণে তাদের সম্পত্তি দান করে। এটিই হচ্ছে ওয়াকফ বা ধর্মীয় দান। এসব সম্পত্তি আল্লাহর, তাই এগুলো বিক্রি বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না, এমন ধারণা প্রচলিত।

ওয়াকফ সম্পত্তির একটি বিশাল অংশ মূলত মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান এবং এতিমখানা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া অনেক সম্পত্তি খালি পড়ে থাকে নয়ত বেদখল হয়ে যায়।

দ্বাদশ শতাব্দীতে মধ্য এশিয়ার শাসকরা দিল্লির সালতানাতে বসার পর থেকেই ভারতে ওয়াকফ ঐতিহ্য চলে আসছে।

এসব ওয়াকফ সম্পত্তি এখন ওয়াকফ অ্যাক্ট, ১৯৯৫ এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই আইনের অধীনে রাজ্যভিত্তিক বোর্ড গঠন করা হয়। এসব বোর্ডে রাজ্য সরকারের মনোনীত ব্যক্তি, মুসলিম আইন প্রণেতা, রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য, ইসলামিক পণ্ডিত এবং ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপক অন্তর্ভুক্ত থাকেন।

দেশটির সরকার বলছে, ভারতে এখন যারা বিশাল বিশাল জমির মালিক, তাদের মধ্যে ওয়াকফ বোর্ডগুলো অন্যতম।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতজুড়ে কমপক্ষে ৮৭২৩৫১টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে।

নয় লাখ ৪০ হাজারের বেশি একরের এসব সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার কোটি রুপি।

সংস্কারের কি আদৌ প্রয়োজন?

ওয়াকফ বোর্ডগুলোতে যে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা, সে বিষয়ে ভারতের মুসলিম গোষ্ঠীগুলো একমত। বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে দখলদারদের সঙ্গে যোগসাজশে ওয়াকফ জমি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এসব সম্পত্তির একটি বড় অংশ বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থা দখল করে নিয়েছে। এসব অভিযোগের দিকেও মনোযোগ দেওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা।

২০০৬ সালে কংগ্রেস সরকারের মেয়াদে গঠিত বিচারপতি সাচার কমিটি ভারতের মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা মূল্যায়ন করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল।

ওই কমিটির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছিল, ওয়াকফ বোর্ডগুলো যে পরিমাণ সম্পত্তির মালিক, তার তুলনায় তাদের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ অনেক কম। এ কারণে সাচার কমিটি ওয়াকফ আইন সংস্কারের সুপারিশ করেছিল।

কমিটির তখনকার হিসাব অনুযায়ী, ওয়াকফ ভূমির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ১২ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব আয় করা সম্ভব ছিল।

বর্তমানে ওয়ারকফ বোর্ডগুলোর বার্ষিক রাজস্ব আয় ২০০ কোটির আশপাশে বলে কিছু পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।

কমিটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, ওয়াকফর মূল রক্ষক যারা, সেই রাজ্য সরকারগুলোর দ্বারাই এসব সম্পত্তি দখল হওয়াটা খুব সাধারণ বিষয়।

সরকারি কর্তৃপক্ষের দখল করে নেওয়া ওয়াকফ সম্পত্তির শত শত প্রমাণ পেয়েছিল সাচার কমিটি।

সরকারি তথ্য অনুসারে, বর্তমানে কমপক্ষে ৫৮৮৮৯টি ওয়াকফ সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে আছে। এসব দখলের ঘটনায় মামলা রয়েছে ১৩ হাজারের বেশি।

এর বাইরে ৪৩৫০০০টি সম্পত্তির কোনো হদিস নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 bornomalanews24.com
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102