নতুন বছরের শুরু থেকে ডলারের বাজার আরও স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারের ওপর ভিত্তি করে ডলারের দাম নির্ধারণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শীর্ষ ২৫ ব্যাংকের সঙ্গে এক বিশেষ সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
মূল উদ্যোগসমূহ:
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রতিদিন ডলার কেনাবেচার তথ্য সংগ্রহ করে এর ভিত্তিতে মধ্যবর্তী দাম নির্ধারণ করা হবে। ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি দামে লেনদেন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা লেনদেনের ৫ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
ডলারের দাম তদারকির জন্য একটি বিশেষ ড্যাশবোর্ড চালু করা হয়েছে, যা প্রতিদিনের তথ্য বিশ্লেষণ করবে। একই সঙ্গে আমদানি দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে নিলামের ব্যবস্থা করা হবে। আগে শুধুমাত্র পছন্দের ব্যাংক বা ব্যবসায়ীদের কাছে ডলার বিক্রির অভিযোগ থাকলেও এখন তা উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা হ্রাস:
প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে একক বিনিময় হার নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রবাসী আয় আহরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি আয়ের ডলারের একই দাম নিশ্চিত করতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অস্থিরতার কারণ ও প্রভাব:
মার্কিন ডলারের মূল্য আড়াই বছর ধরে অস্থির। এ সময়ে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২৭ টাকায় পৌঁছেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতীত নীতিমালা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমদানি দায় মেটানো, ঋণ পরিশোধের চাপ এবং বৈদেশিক ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতার মতো বিষয়গুলোও অস্থিরতাকে বাড়িয়ে তোলে।
তবে সরকার বদলের পর নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে নীতিগত পরিবর্তন আনার ফলে ডলার বাজার এখন অনেকটাই স্থিতিশীল হয়েছে। ডলারের দাম ১২০ টাকায় সীমাবদ্ধ রেখে আড়াই শতাংশ ওঠানামার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা বাজারে ভারসাম্য আনতে সহায়ক হয়েছে।
আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ:
ডলারের বাজারকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে ডলারের বাজার আরও স্থিতিশীল হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নতুন বছরের শুরুতে এই উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য একটি ইতিবাচক দিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও আমদানি-রপ্তানিকারকরা আশা করছেন, এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে।