বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটায় এক জরুরি ঘোষণায় এ তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল।
প্রথমে পরিকল্পনা ছিল, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ আখ্যা দিয়ে এর পরিবর্তন এবং ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করার বিষয়টি উল্লেখ করা হবে বলে জানানো হয়েছিল।
তবে সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার লক্ষ্যে সরকার ঘোষণাপত্রটি প্রণয়ন করবে।”
সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঘোষণাপত্র প্রকাশের পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন। আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “রাষ্ট্র যখন এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তখন আমাদের জায়গা থেকে এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”
ঘোষণাপত্র প্রকাশ স্থগিত করার পরও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ অনুষ্ঠিত হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, “ছাত্র-জনতার বিপ্লবী চেতনার প্রতীক হিসেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমাদের একত্রিত হওয়ার পরিকল্পনা অব্যাহত থাকবে। এই কর্মসূচি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, এটি জাতির ঐক্য ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।”
আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ অভিযোগ করেন, “জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক দলিল উপস্থাপন করতে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে সরকার এই ঘোষণাপত্র গ্রহণের ব্যাপারে সম্মতি জানিয়ে আমাদের প্রাথমিক বিজয় নিশ্চিত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের উদ্যোগকে ব্যাহত করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সেই ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছে। এটি জন-আকাঙ্ক্ষার জয়।”
‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে হাজারো ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনের নেতারা আহ্বান জানিয়েছেন, সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসে।
সরকারের ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগকে কিছু রাজনৈতিক দল স্বাগত জানালেও কেউ কেউ মনে করছে, ঘোষণাপত্র প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন ছিল।
এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো এখন সরকারের ঘোষণাপত্রের দিকে তাকিয়ে আছে।