আজ, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রতিযোগিতা ত্রিমুখী—একদিকে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া আম আদমি পার্টি (আপ), অন্যদিকে ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া বিজেপি ও কংগ্রেস। বিজেপি, বহু বছর পর দিল্লির শাসনভার পুনরুদ্ধারের আশায়, বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, পাঁচ বছর আগের তুলনায় আসন কমলেও, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আপ টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসতে চলেছে।
কিন্তু বিজেপির নেতাদের, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের, পাল্টা দাবি—২৮ বছর পর তারা আবার রাজধানীর দখল নিতে প্রস্তুত। এই দাবির মধ্যে দিল্লির ৭০টি বিধানসভা আসনে ভোটাররা আজ তাদের রায় দিচ্ছেন। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ, যেখানে ১ কোটি ৫৬ লাখ ভোটার ৬৯৯ জন প্রার্থীর ‘ভাগ্য’ নির্ধারণ করবেন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মোট ১৩,৭৬৬টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। দিল্লিতে আপ, কংগ্রেস এবং মায়াবতীর বিএসপি (বহুজন সমাজ পার্টি) ৭০টি আসনে লড়াই করছে, অন্যদিকে বিজেপি ৬৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এনডিএ’র দুই সহযোগী, জেডিইউ এবং এলজেপি (রামবিলাস), একটি করে আসন ছেড়ে দিয়েছে। তিনটি বাম দল পৃথকভাবে আটটি আসনে লড়ছে—সিপিআই ছয়, সিপিএম দুই এবং সিপিআইএমএল লিবারেশন দু’টিতে।
সংখ্যালঘুপ্রধান দুটি আসন, ওখলা এবং মুস্তাফাবাদে, তেলঙ্গানার হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ লড়ছে। বিজেপির সহযোগী অজিত পওয়ারের এনসিপি আলাদা করে ৩০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
দিল্লির দুটি বিধানসভা আসনে চমকপ্রদ লড়াইয়ের অপেক্ষা। নয়াদিল্লি কেন্দ্রে, আপ প্রধান কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে প্রয়াত সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সাহিব সিং বর্মার ছেলে প্রবেশকে। কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন আরেক প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ।
কালকাজি আসনে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনার বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে লড়বেন সাবেক সাংসদ রমেশ বিধুরি। কংগ্রেসের প্রার্থী সাবেক আপ বিধায়ক অলকা লাম্বা।
সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে এবার জঙ্গপুরায় দাঁড় করিয়েছে কেজরিওয়ালের দল। সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন কংগ্রেসের ফারহাদ সুরি এবং বিজেপির তারবিন্দর সিং মারওয়াহা। ৭০ আসনের দিল্লিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৩৬টি আসন। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়ালের দল প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৬২টি আসন জিতেছিল, বিজেপি পেয়েছিল ৮টি আসন।
এবারের নির্বাচন কেজরিওয়ালের জন্য এক অস্তিত্বের লড়াই। স্বচ্ছতার প্রতিমূর্তি হিসেবে ভারতীয় রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেও, আবগারি নীতি দুর্নীতি কেবল আপের দলগত ইমেজ নয়, বরং কেজরিওয়ালের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বিজেপির দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে, দিল্লিবাসী কেজরিওয়ালের পুরোনো ইমেজের প্রতি আস্থা রাখবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এখন, ভোটের ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে সবার মনে কৌতূহল। দিল্লির রাজনীতির এই নাটকীয় পর্বে, কে হবে বিজয়ী, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।