দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ভল্টে কর্মকর্তাদের অর্থ-সম্পদ জমা রাখার তিন শতাধিক লকারের সন্ধান পেয়েছে। এই লকারগুলোতে বর্তমান ও সাবেক ঊর্ধ্বতন ভিআইপি ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আদালত থেকে লকার খোলার অনুমতি পাওয়ার পর, দুদক জানিয়েছে যে, চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলার সময়, দুদকের অনুসন্ধান বিভাগের প্রধান কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে লকার খোলার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। আদালত সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছে।” অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন ডেপুটি গভর্নরের নাম উঠে আসছে।”
অভিযানের সময়, এস কে সুর চৌধুরীর গোপন লকার থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। এই অভিযানে তিন শতাধিক ব্যাংক কর্মকর্তাদের নামে লকারের তথ্য পাওয়া গেছে, যা রিজার্ভ চুরি ও বিভিন্ন সময়ে আলোচিত ব্যক্তিদের নামের সঙ্গে জড়িত। দুদক মনে করছে, এই লকারগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে, যা অনুসন্ধানের জন্য অত্যাবশ্যক।
দুদক ও আদালত সূত্রে জানা যায়, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানকে ইনভেন্টরি করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযান পরিচালনা করা হতে পারে। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, “এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে।”
গত ২৬ জানুয়ারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে তল্লাশি চালানোর সময় সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর সেফ ডিপোজিট থেকে ৫৫ হাজার ইউরো, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, ১০০৫.৪ গ্রাম স্বর্ণ ও ৭০ লাখ টাকার এফডিআর উদ্ধার করা হয়। এই সম্পদ তার নিয়মিত আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি।
দুদক জানায়, ৩০ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সম্পদ সাময়িকভাবে ফ্রিজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে, এখন থেকে লকারের মালিকরা তাদের সম্পদ সরাতে পারবেন না।
এস কে সুর চৌধুরীর লকারে পাওয়া গেছে সোনার চামচ, বোতাম, স্বর্ণালংকার, মার্কিন ডলার ও ইউরো। ২৬ জানুয়ারির অভিযানে দেখা যায়, লকারে ১ কেজি স্বর্ণ, ১ লাখ ৬৯ হাজার মার্কিন ডলার, ৫৫ হাজার ইউরো এবং ৭০ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এদিকে, গত ১৯ জানুয়ারি এস কে সুরের বাসা থেকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা জব্দ করার সময় দুদক জানতে পারে, বাংলাদেশ ব্যাংকে তার নামে একটি লকার রয়েছে।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হওয়ার ঘটনায় এস কে সুর চৌধুরী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল।
দুদক এখনো অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে এবং আশা করছে, লকারের তল্লাশি থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে, যা জনসাধারণের কল্পনারও বাইরে।