রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আমরণ অনশনে বসে আছেন। আজ, বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচির জন্য ক্যাম্পাসে জড়ো হচ্ছেন অন্যান্য ছাত্ররা। তবে, আশ্চর্যজনকভাবে, এই কর্মসূচির সমর্থনে এখন পর্যন্ত কাউকে কোনো বক্তব্য দিতে কিংবা কার্যক্রম পালন করতে দেখা যায়নি।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে তিতুমীর কলেজের মূল ফটকের সামনে ছয়জন শিক্ষার্থী অনশনে বসে আছেন, তাদের চারপাশে দাঁড়িয়ে আছেন আরও অনেক শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের ভেতরে, সরস্বতী পূজার আয়োজন চলছে, যেখানে দর্শনার্থীরা অবাধে প্রবেশ করতে পারছেন। কিন্তু এর বাইরে, অন্য কোনো কার্যক্রম কিংবা অবরোধের সমর্থনে মিছিল বা স্লোগান দিতে কাউকে দেখা যায়নি।
আজকের কর্মসূচির আওতায়, সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছেন যে, তারা বেলা ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা ব্যারিকেড (অবরোধ) পালন করবেন। মহাখালীর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, রেল গেট, আমতলী মোড় এবং গুলশান লিংক রোড এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘তিতুমীর ঐক্য’র উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান মুক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে। আমরা গতকাল অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম, কিন্তু বিশ্ব এজতেমার জন্য বেলা ১১টা থেকে অবরোধ শিথিল করেছিলাম। তবে আগামীকাল ফের অবরোধ ঘোষণা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের আন্দোলনের পর আমরা আশা করেছিলাম যে, একটি শিক্ষার্থীবান্ধব রাষ্ট্র গঠিত হবে, যেখানে শিক্ষার্থীদের কথা গুরুত্ব পাবে। আমাদের কর্মসূচির জন্য অনেকেই আমাদের ওপর রাগ করে আছেন, তাদের কাছে আমরা ক্ষমা চাই। আমরা আপনারা সন্তান। রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে।”
এ সময় তিনি তিনটি দাবি তুলে ধরেন:
১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
২. শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আইন উপদেষ্টার চাপ সৃষ্টি করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে এবং আইন উপদেষ্টাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রসঙ্গত, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন। মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে, গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল থেকে দাবি আদায়ের জন্য আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
এই আন্দোলন, যা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তা সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই সংগ্রাম, তাদের স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে।