চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল (ট্যারিফ) হঠাৎ ৪১ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী মহলে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারী শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা এই সিদ্ধান্তকে চক্রান্ত হিসেবে আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরকে অকার্যকর করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে, যার মূল ক্ষতি হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাধারণ জনগণের ওপর। গতকাল চট্টগ্রামের একটি পাঁচতারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী নেতাদের সমন্বয় সভায় এ প্রতিবাদ উঠে আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। সভায় বক্তারা বলেন, দেশের অন্যান্য প্রধান বন্দর মোংলা ও পায়রায় কোনো মাশুল বাড়েনি, অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে হঠাৎ এত বড় বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। নেতারা অভিযোগ করেন, অংশীজনদের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হঠাৎ ট্যারিফ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা গণতান্ত্রিক ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের পরিপন্থী। বক্তব্যে উঠে আসে, চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের প্রবাহ কখনোই নেতিবাচক ছিল না। বরং এখানকার আমদানি-রপ্তানির ওপর দেশের অর্থনীতি নির্ভরশীল। অতিরিক্ত ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে, যার চূড়ান্ত বোঝা পড়বে সাধারণ জনগণের ওপর। বিশেষভাবে, দেশের গার্মেন্টস খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা। তারা বলেন, ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়ার তুলনায় এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যয় বেশি। নতুন মাশুল কার্যকর হলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় আরও পিছিয়ে পড়বে এবং বিদেশি ক্রেতারা অন্য দেশে চলে যেতে পারে। বক্তারা আরও জানান, বন্দর একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে লাভ করে যাচ্ছে। অতএব, মন্দা পরিস্থিতিতে হঠাৎ মাশুল বাড়ানো অনাকাঙ্ক্ষিত ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তারা মনে করেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক ও টেকসই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো জরুরি। এছাড়া, কোনোভাবেই বন্দর ব্যবস্থাপনায় ব্যবসায়ীদের মতামত উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তারা। সমাবেশে উপস্থিত নেতারা সরকারের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দেন—বন্দর নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না। তারা ঘোষণা দেন, দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, যাতে চট্টগ্রাম বন্দর তার কার্যকারিতা ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ধরে রাখতে পারে। আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হয় সভা থেকে। বক্তারা দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, দেশের প্রধান বন্দরকে ঘিরে কোনো ধরনের ‘খেলা’ মেনে নেওয়া হবে না, বরং অংশীজনদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।