বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে টানা পতন অব্যাহত রয়েছে। ২০২০ সালের পর গত মঙ্গলবার স্বর্ণের দামে সবচেয়ে বড় দরপতন দেখা যায়, যা বুধবারও অব্যাহত ছিল। দিনের শুরুতে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়া এবং মার্কিন ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে স্বর্ণের দামে নতুন করে পতনের চাপ তৈরি হয়। বাংলাদেশ সময় বুধবার বিকেল ৫টা ৩ মিনিটে আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট স্বর্ণের দাম কমে দাঁড়ায় প্রতি আউন্স ৪ হাজার ১৭ দশমিক ২৯ ডলারে, যা আগের দিনের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ কম এবং প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। যদিও দিনের শুরুতে স্বর্ণের দাম উঠেছিল ৪ হাজার ১৬১ ডলার পর্যন্ত। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য নির্ধারিত ইউএস গোল্ড ফিউচার্সের দামও কমেছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ, প্রতি আউন্সে নেমে এসেছে ৪ হাজার ৩২ ডলারে। ডলারের বিপরীতে অন্যান্য মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় স্বর্ণের দাম আরও চাপে পড়েছে। মার্কিন ডলার সূচক ০ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছালে অন্যান্য মুদ্রার বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বর্ণ ক্রয় আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এর আগের সেশনে স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৩৮১ ডলারে পৌঁছেছিল, কিন্তু পরদিন মঙ্গলবার তা হঠাৎ ৫ দশমিক ৩ শতাংশ কমে যায়, যা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় পতন। বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছরে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মার্কিন সুদের হার হ্রাসের প্রত্যাশা এবং বিনিয়োগ তহবিলের প্রবাহের কারণে স্বর্ণের দাম ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। তবে সাম্প্রতিক দরপতন বাজারকে নতুন দিকনির্দেশনা দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। এখন বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদনের জন্য, যা শুক্রবার প্রকাশিত হবে। এই প্রতিবেদন থেকেই মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের ভবিষ্যৎ সুদের হার নীতির আভাস পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু স্বর্ণ নয়, অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দামেও পতন দেখা গেছে। স্পট সিলভারের দাম ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪৭ দশমিক ৮৪ ডলারে নেমেছে, মঙ্গলবার এটি আরও বড় ধাক্কা খেয়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশ কমেছিল। প্লাটিনামের দাম ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে এক হাজার ৫৩০ ডলারে, আর প্যালাডিয়ামের দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে এখন প্রতি আউন্সে এক হাজার ৩৯১ ডলারে লেনদেন হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে মূল্যবান ধাতুর এই অস্থিরতা আগামী দিনগুলোতে বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে।