গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ক্ষেত্রে এক অনন্য ও চমকপ্রদ ঘটনা ঘটল, যা দেশের সংবাদ পরিবেশকে গভীর প্রভাবিত করেছে। দৈনিক ইংরেজি সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি স্টার’ তাদের ৩৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ছাপা সংস্করণ প্রকাশ করতে পারেনি। কনসাল্টিং এডিটর কামাল আহমেদের বরাত দিয়ে জানা যায়, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে এই পত্রিকাটি আপাতত কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশের দুই শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ‘দ্য ডেইলি স্টার’ ও বাংলা দৈনিক ‘প্রথম আলো’ সম্প্রতি হামলার মুখে পড়েছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠান দেশের প্রধান সংবাদ উৎস হিসেবে বহু বছর ধরে স্বীকৃত। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আসা চাপ ও হুমকির মাঝেও তারা টিকে ছিল। এই হামলার মধ্যে কেউ গুরুতর আহত না হওয়া এক অলৌকিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হামলার সময় ২৮ জন কর্মী কয়েক ঘণ্টা ধরে ভবনের ছাদে আটকা পড়ে ছিলেন এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা হয়। এই হামলার পেছনে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিরোধের ছায়া স্পষ্ট। ‘দ্য ডেইলি স্টার’ ও ‘প্রথম আলো’ পত্রিকাগুলোকে অনেকেই ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল হিসেবে দেখেন, তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে কিছু গোষ্ঠী এই পত্রিকাগুলোকে আওয়ামী লীগ ও ভারতপন্থী হিসেবে মনে করছে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পরে এই মতাদর্শিক বিভাজন আরও গাঢ় হয়েছে। পত্রিকাগুলো কট্টরপন্থী ইসলামিবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিমালা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম নিয়েও সমালোচনা করেছে। দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, গুম, বৈরীতি ও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ইস্যুতে প্রশ্ন তোলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও সামাজিক মাধ্যমে আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের রিপোর্টিংয়ের আরেকটি বিতর্কিত দিক হলো ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কিত বিবৃতি ও ইতিহাস নিয়ে চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক কালেই স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগের ভূমিকা ও জাতির পিতার অবদান নিয়ে নতুন বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছে, যা রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের কারণ হিসেবে কাজ করছে। এই সব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধান সংবাদপত্রগুলোর ওপর হামলা ও প্রকাশনা বন্ধের ঘটনা দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির গুরুতর সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা ও মতপ্রকাশের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।