দৈনিক যুগান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত দুই বছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এই চুক্তির কারণে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় সম্পদের বড় অপচয় হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে সম্পাদিত এই চুক্তি শুরু থেকেই স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল; বর্তমান তথ্যগুলো সেই সন্দেহকে আরও দৃঢ় করছে। চুক্তির আওতায় আদানি গ্রুপ থেকে কেনা বিদ্যুতের মূল্য দেশের অভ্যন্তরীণ কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র এবং ভারতের অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের মধ্যপ্রদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী অন্য একটি কোম্পানি প্রতি ইউনিট মাত্র ৮.২৫ টাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যেখানে পিডিবিকে আদানির কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে ১৪.৮৬ টাকায়। এমনকি নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দামও আদানির দাম থেকে প্রায় অর্ধেক কম। চুক্তির অন্যতম সমস্যা হলো ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’, যা পিডিবিকে প্রতি মাসে ৪৫০ কোটি টাকার বেশি দিতে হচ্ছে, এমনকি বিদ্যুৎ কিনলেও। ২৫ বছরের চুক্তিতে এই খরচ প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি হবে, যা দিয়ে নিরাপরাধভাবে দেশের বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব। এছাড়া কয়লার দাম নিয়েও কারসাজি রয়েছে; যেখানে অন্যান্য কেন্দ্র প্রতি টন কয়লা ৭১ থেকে ৭৩ ডলারে কিনছে, সেখানে আদানির খনিজ থেকে পাওয়া কয়লার জন্য পিডিবিকে প্রায় ৭৭ ডলার দিতে হচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তিকে দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। যেখানে দেশের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াট, সেখানে মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুতের জন্য এমন চুক্তিতে আটকে পড়া যৌক্তিক নয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই অসম চুক্তির পুনঃমূল্যায়ন বা প্রয়োজন হলে বাতিলের প্রয়োজনীয়তার দাবি উঠেছে। পিডিবি চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে সরকারকে বিষয়টি জানিয়েছেন, যা ইতিবাচক হলেও তা যথেষ্ট নয়। দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতি ও অপচয় থেকে বাঁচাতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে আদানির সঙ্গে নতুন দরকষাকষি করা প্রয়োজন, যাতে বিদ্যুতের মূল্য সঠিক ও যৌক্তিক পর্যায়ে আসে। এছাড়া, এই চুক্তি সম্পাদনের পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদক্ষতা কিংবা দুর্নীতির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা উচিত। দেশীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের অন্যতম প্রধান দাবি। বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এই চুক্তি সংশোধন বা বাতিল করা হলে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।