স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দেশের একমাত্র এলিট ফোর্স র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ইতোমধ্যে জননিরাপত্তা রক্ষায় গণমানুষের আস্থার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
সোমবার (২৯ মার্চ) সকালে র্যাব ফোর্সেসের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুর্মিটোলা র্যাব সদর দফতরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ধর্মীয় জঙ্গি মতবাদ প্রচার, অবৈধ অস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অবৈধ মাদকের বিস্তারসহ গুরুতর অপরাধের করাল গ্রাস থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ‘দি আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯’ সংশোধন করে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গঠিত হয়েছিল।
র্যাব চরমপন্থীর আগ্রাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের রক্তাক্ত জনপদে মানুষ পেয়েছে নিরাপদ জীবন। ফলে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রেয়েছে। জঙ্গি দমনের মাধ্যমে দেশের আপামর জনগণের নিরাপত্তা সমুন্নত হয়েছে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, জলদস্যুতা দমনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিরাজমান। বিভিন্ন হত্যা, খুন, অপহরণ, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের মাধ্যমে ভিকটিম পরিবারের বিচার পাওয়ার পথ সুগম করেছে। র্যাব মানবপাচার বিরোধী অভিযান পরিচালনা ও ভিকটিম উদ্ধার করার ফলে নতুন জীবনের স্বাদ পেয়েছে অনেকে। বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের পাশে থাকে। র্যাব মানবিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে দুস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিগত ও বর্তমান সময়ে শীর্ষ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনে এই এলিট ফোর্স। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি দমনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি ও কৌশলের আলোকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদমনে যে সফল তৎপরতা চালিয়েছে তাতে র্যাবের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
২০১৬ সালে হলি আর্টিজানসহ শোলাকিয়া, সিলেটের আতিয়া মহল, ঢাকার আশুলিয়া, মিরপুর, তেজগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলে ও ঝিনাইদহসহ প্রতিটি জঙ্গি দমন অপারেশনে র্যাব তার পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর র্যাব একইদিনে আশুলিয়া, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে অভিযান চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করে। এই দিন হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও জেএমবি প্রধান সারোয়ার জাহান গ্রেফতার এড়াতে বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়ে, পরবর্তী সময়ে তার মৃত্যু হয়। এধরনের বহু অভিযান চালিয়ে র্যাব জনমনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। পাশাপাশি বিপথগামী জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষে কাজ করছে র্যাব। মোটিভেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম সহায়তা প্রদান করে স্বাবলম্বী করা হচ্ছে। র্যাবের এই মানবিক উদ্যোগটি সফল হোক। এভাবে র্যাব মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ দমন, চরমপন্থী দমন, জলদস্যু দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সর্বশেষ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। র্যাবের বিশেষ উদ্যোগে র্যাব ডি-র্যাডিকালাইজেশন ও রি-হ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম ‘নবদিগন্তের পথে’ অত্যন্ত অভিনব ও যুগান্তকারী এই উদ্যোগ। অপরাধীর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় আবার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা। আত্মসমর্পণকৃত ৪২১ জন সন্ত্রাসীদের (জলদস্যু ও জঙ্গি) পুনর্বাসন প্রক্রিয়া যুক্ত রয়েছে।
মানবিকতা দিয়ে অপরাধ দমনের এ সাফল্য বিশ্বের বুকে নজিরবিহীন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
Leave a Reply