আজ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : রাত ৯:২৩

বার : শুক্রবার

ঋতু : গ্রীষ্মকাল

উদ্বোধন মুহূর্তে যাদের স্মরণ করলেন শেখ হাসিনা

উদ্বোধন মুহূর্তে যাদের স্মরণ করলেন শেখ হাসিনা

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে সুধী সমাবেশে বক্তৃতা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সবার কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। যারা কাজ করার সময় পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। যারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নানা যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই আনন্দঘন মুহূর্তে সুধীবৃন্দ, দেশবাসী, প্রবাসী ভাইবোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমার ছোট বোন রেহানা, আমাদের ছেলেমেয়েরা সজীব ওয়াজেদ, সায়েমা ওয়াজেদ, রেদওয়ান মুজিবসহ সব নাতি-নাতনিকে দেশবাসীর সঙ্গে দোয়া জানাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশ, ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছে বাংলাদেশ, যার নেতৃত্বে পেয়েছি—মহান নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবকে স্মরণ করি শ্রদ্ধার সঙ্গে।’

তিনি বলেন, ‘এ দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করা, সেটাকে আমরা দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি। যখন সব প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালো, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম—এই সেতু নিজস্ব টাকায় করবো। এ ঘোষণার পর আমার দেশবাসী, সাধারণ মানুষের কাছে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিলাম। মানুষের শক্তিটাই বড় শক্তি। সেই শক্তি নিয়েই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করি।’

প্রধানমন্ত্রী বেদনার সঙ্গে স্মরণ করেন ৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, মা, ছোট তিন ভাই, নববধূ, একমাত্র চাচা, ফুফাসহ আমাদের পরিবারের যারা শাহাদাতবরণ করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ব্রিগেডিয়ার জামিল ছুটে এসেছিলেন পারেননি, ঘাতকের বুলেট তাকেও হত্যা করে। শ্রদ্ধা জানাই, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি। যারা এই অন্যায়কে প্রতিবাদ করেছিল এবং করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিল।’

পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন—প্রকৌশলী জামিলুর রেজাসহ সেতু নির্মাণের সময় যারা মারা গেছেন, তাদের মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেতু নির্মাণের সময় ষড়যন্ত্র করা হয়। দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে পরিবারগুলোকে যন্ত্রণার মধ্যে ফেলা হয়েছিল। সেই অপবাদ নিয়েছিল শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, রেদওয়ান মুজিব, তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন, মোশাররফ হোসেন ভূইয়াসহ যারা কাজটির সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে, তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও যারা সেতু নির্মাণে জড়িত, সব প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, শ্রমিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা জড়িত—সংশ্লিষ্ট সবারর প্রতি কৃতজ্ঞতা। কৃতজ্ঞতা দেশবাসীর প্রতি, যারা সাহস জুগিয়েছিল। পদ্মা সেতুর দু’ধারের মানুষ নির্দ্বিধায় জমি হস্তানন্তর করেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

এর আগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে পৌঁছান তিনি। সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরান বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মঞ্চের সামনে উপস্থিত রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, মাহবুব-উল হক হানিফ, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন, ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, দেশের দীর্ঘতম এই সেতুর দাফতরিক নাম ‘পদ্মা সেতু’। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু রাজধানীর সঙ্গে মেলবন্ধন সৃষ্টি করলো দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাকে। দ্বিতল দেশের দীর্ঘতম এই সেতুতে গাড়ি ও রেল দুটোই চলবে। সেতু নির্মিত হয়েছে কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে। সেতুতে থাকছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা। মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া, মাদারীপুর জেলার শিবচর এবং শরীয়তপুর জেলার জাজিরার সীমান্তবেষ্টিত পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক রয়েছে ১২ দশমিক ১২ কিলোমিটার।

১৯৯৯ সালে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। এরপর করোনা মহামারিতেও একদিনের জন্য কাজ থেমে থাকেনি; দীর্ঘ সাত বছরে দিনরাত হাজারো মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাস্তবে রূপ নিয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category