আজ ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : রাত ১০:০৪

বার : মঙ্গলবার

ঋতু : গ্রীষ্মকাল

জেলেনস্কি কি যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন?

জেলেনস্কি কি যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন?

পোল্যান্ডে প্রাণঘাতী ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণ নিয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ব্যাখ্যা পরস্পরবিরোধী। কিন্তু এতে আবছা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের দাবি কীভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করবে যুক্তরাষ্ট্র।

গত মঙ্গলবার ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের পর শুরুতে সতর্ক হয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। এই বিস্ফোরণ জোটের চার্টারের ৫ ধারা সক্রিয় করার দিকে চলে যেত। কিন্তু এই উত্তেজনা দ্রুতই কমে আসে যখন পোল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ইউক্রেনীয় আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র দুর্ঘটনাবশত পোলিশ ভূখণ্ডে বিস্ফোরিত হয়েছে বলে একমত হয়ে যায়।

অবশ্য, এক দেশের ওপর হামলা মানে জোটের সব দেশ আক্রান্ত হওয়ার নীতিতে উত্তেজনা বৃদ্ধির হুমকি থাকলে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে দাবি করছিলেন যে, এটি যে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র নয়, এই বিষয়ে তার কোনও সন্দেহ নেই। জেলেনস্কির এই মন্তব্যের বিষয়ে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এটি কোনও প্রমাণ নয়।

কিয়েভের প্রতি মার্কিন সামরিক সহযোগিতা এখনও আগের মতোই রয়েছে। কিন্তু বাইডেনের মন্তব্য প্রমাণ করছে যে তারা ইউক্রেনের সবকিছুর সঙ্গে একমত নয়। জুন মাসে জেলেনস্কির এক উপদেষ্টা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে বাইডেনের করা মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ওই সময় বাইডেন বলেছিলেন, রাশিয়ার আক্রমণের আগে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট মার্কিন সতর্কতার কথা শুনতে চাননি।

আগস্টে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর কলামিস্ট টমাস ফ্রিয়েডম্যান বিবরণ দিয়েছিলেন বাইডেন ও জেলেনস্কি মধ্যে গভীর অনাস্থার। তিনি আরও ব্যাখ্যা করেছিলেন, ইউক্রেনীয় নেতৃত্ব যেভাবে চলছে তা নিয়ে কতটা গভীর উদ্বিগ্ন মার্কিন কর্মকর্তারা।

ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকার ইতিহাসের অধ্যাপক ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি পরিকল্পনা বিষয়ক সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল কিমেজ বলেন, ইউক্রেনের একটি খুব আগ্রাসী, অগ্রসরমান, সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম নির্ভর যোগাযোগের ধাঁচ রয়েছে। যা খুব কার্যকর।

কিমেজ বলেন, কিন্তু এর ত্রুটি ও সমস্যা রয়েছে। মুশকিল হলো জেলেনস্কি এই ধারা থেকে পিছু হটতে রাজি না। আমার মনে হয় যুদ্ধ বিষয়ে কিয়েভের পক্ষ থেকে আসা তথ্যের প্রশ্নবিদ্ধ সঠিকতা নিয়ে হয়ত হতাশা রয়েছে। জেলেনস্কি তার স্টাইলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এটি বিরক্তিকর হতে পারে।

কিমেজ আরও বলেন, জেলেনস্কি যুদ্ধকালীন নেতা হিসেবে খুব কার্যকর হিসেবে হাজির করছেন। আমার মনে হয় না তিনি যে কারণে লড়াই করছেন তা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ আছে। তিনি প্রচুর সমর্থন পাচ্ছেন কিন্তু কিছু মাত্রায় ব্যক্তিগত বিরোধ থাকতে পারে। যা স্বাভাবিক।

ইতিহাসের এই অধ্যাপক বলছেন, পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে মত-বিরোধের ঝুঁকির মুখে শুধু নয়, জেলেনস্কি সামনে ঝুঁকি হলো হলিউড আখ্যানের মতো এই সংঘাতের দ্রুত হাসি-খুশি সমাধান এবং তার হাতে এমন কিছু নেই।

তিনি বলেন, হলিউড আখ্যানের মাত্রায় তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কঠিন। ফলে তাকে এজন্য আরেকটি ভিত্তি খুঁজে পেতে হবে।

বৃহস্পতিবার নিজের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করেছেন জেলেনস্কি। সিঙ্গাপুরে ব্লুমবার্গের নিউ ইকনোমি ফোরামে তিনি বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের কারণ আমি শতভাগ জানি না। অন্যদিকে ন্যাটোর মহাসচিব বলেছিলেন, ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে রাশিয়া প্রায় ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর পোল্যান্ডে বিস্ফোরিত ক্ষেপণাস্ত্রের দায়ভার পুরোপুরি রাশিয়ার।

জেলেনস্কির ভাবমূর্তি

মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মাস্টার সার্জেন্ট ডেনিস ফ্রিটজ বলেন, আমার মনে হয় না এতে জেলেনস্কির ভাবমূর্তি প্রভাবিত হবে। কিন্তু আমি মনে করি তার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগামীতে তিনি যদি বলে রুশ অস্ত্র একটি স্কুলভবন বা আরেকটি আবাসিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমার ধারণা, আগামীতে তিনি আরও সতর্ক হবেন।

ফ্রিটজ বলেন, কিন্তু আমাদের বিষয়টি জেলেনস্কির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করছে তার সেনারা এবং এই মুহূর্তে সাফল্য পাচ্ছে। কিন্তু রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের কোনও পাল্টা জবাব নেই তাদের কাছে। তাই আমার মনে হয় তিনি আতঙ্ক থেকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং পশ্চিমা ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেছে।

এই সমর্থন চাওয়ার জবাব পাওয়া গেছে ঘটনার দুই দিন পর যখন মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন ইউক্রেনকে ন্যাশনাল অ্যাডভান্সড সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেমস (নাসামস) দেওয়ার ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে এগুলোর সফলতার হার শতভাগ।

নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক মাইয়া ক্রস বলেছেন, পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণ নিয়ে বিরোধপূর্ণ দাবির পরও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউক্রেনের বীর নেতা হিসেবে বহাল রয়েছে জেলেনস্কি। পোল্যান্ডে আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্রের উৎস সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবে রাশিয়ার ভয়াবহ ধারাবাহিক বোমাবর্ষণের মধ্যে থাকা দেশ হিসেবে তিনি দায় তাদের ওপর চাপিয়েছেন।

জেলেনস্কির বিশ্বাসযোগ্যতা

মাইয়া ক্রস বলেন, জেলেনস্কি হয়ত তার বিশ্বাসযোগ্যতা কিছুটা হারাতে পারেন যদি কোনও ভিত্তি ছাড়া অভিযোগ করতে থাকলে এবং বিপরীত যুক্তির প্রমাণের মুখে যদি পিছু না হটেন। এখন পর্যন্ত এমন কিছু ঘটেনি ক্ষেপণাস্ত্রের উৎস নিয়ে ধোঁয়াশার কারণে।

মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি এই সপ্তাহে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন। যা জেলেনস্কির লক্ষ্যের সঙ্গে খাপ খায় না। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট চান আলোচনার আগেই দখলকৃত সব ভূখণ্ড ছাড়তে হবে রাশিয়াকে।

অবশ্য মিলি বারংবার উল্লেখ করেছেন, বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান হলো আলোচনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইউক্রেন। খেরসন ও খারকিভ অঞ্চলে ইউক্রেন সাফল্য পেলেও পুরো ইউক্রেন থেকে তাদের বিতাড়িত করা খুব কঠিন কাজ হবে উল্লেখ করে জেলেনস্কির লক্ষ্য অর্জন হওয়া নিয়ে তিনি নিজের সংশয় প্রকাশ করেছেন।

কিমেজ বলছেন, কংগ্রেসের কয়েকজন সদস্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে দেওয়া ক্রমাগত আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। যেমন, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য মারজোরি টেইলর গ্রিন (রিপাবলিকান) ইঙ্গিত দিয়েছেন, রিপাবলিকানরা হয়ত ইউক্রেনকে দেওয়া আর্থিক ও সামরিক সহযোগিতার গতি মন্থর করবে কিন্তু এতে সহযোগিতার নীতি পাল্টাবে না।

কিমেজ বলেন, এমন কিছু হলেও আমার মনে হয় মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর আগের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

সূত্র: নিউজউইক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category