আজ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : দুপুর ১:৩১

বার : শনিবার

ঋতু : গ্রীষ্মকাল

শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৬৪দিন আগাম ইনডেমনিটি দিয়ে শেখ হাসিনা লুটপাট মডেল তৈরি করা হয় বিদ্যুৎখাতে

শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৬৪দিন

আগাম ইনডেমনিটি দিয়ে শেখ হাসিনা লুটপাট মডেল তৈরি করা হয় বিদ্যুৎখাতেsharethis sharing buttonশেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৬৪দিন

শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৬৪দিন

নিজস্ব প্রতিনিধি

ক্যাপাসিটি চার্জের নামে শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় তহবিলে রীতিমত হরিলুট চালিয়েছে। শেখ হাসিনার দু:শাসনেই কেবল এমন হরিলুট সম্ভব। এই হরিলুটের বিরুদ্ধে কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না, এবং কোন আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে না, এমন আইনও তৈরি করা হয়েছিল শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারী ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই। নির্বিঘ্নে রাষ্ট্রীয় তহবিল লুটপাটের জন্যই মূলত দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইন তৈরি করেন শেখ হাসিনা। এই আইনে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে আগাম ইনডেমনিটি দেওয়া হয়। এই ইনডেমনিটির আওতায় লুটপাট চালিয়েছেন শেখ পরিবার ঘনিষ্ঠ আওয়ামী ব্যবসায়ীরা। সরকারি হিসাবেই ১৪ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাড়াই আওয়ামী ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে নিয়ে গেছেন ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আগামী ২ বছর ক্যাপাসিটি চার্জের নামে পিডিবিকে লোকসান দিতে হবে ১ লাখ সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা।

খোদ শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) গবেষণা বলছে, বিদ্যুৎ খাতটি যেন চীন-ভারতের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। যাতে সংকট বাড়িয়েছে, বিশেষ দায়মুক্তি আইন। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার প্রথা এক ধরনের ‘লুটেরা মডেল’ এবং তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চুক্তির ফল বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছে ।

বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তৈরি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অলস বসিয়ে রাখলে চুক্তি অনুযায়ী তাদের যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়, সেটারই আনুষ্ঠানিক নাম ক্যাপাসিটি চার্জ।

‘২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি’ নামে বিশেষ আইন করে সরকার। আইনটি দায়মুক্তি আইন নামেই বেশি পরিচিত। এ আইন বিদ্যুৎ খাতে লোকসান বয়ে আনছে বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, দায়মুক্তির সুযোগ দেওয়া এ আইনের বলে বিদ্যুৎ খাতের ইউনিটপ্রতি ক্রয়মূল্য ও খরচের মডেল জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জসহ হিসাব করলে দেখা যায়, কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিটপ্রতি বার্ষিক গড় মূল্য ১০০ টাকাও ছাড়ায়। মার্কিন ডলারে অর্থ পরিশোধ করা হয় বলে এতে পিডিবির লোকসান থামানো যাচ্ছে না। এই দুর্বৃত্তায়ন থামানো জরুরি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৪ বছরে সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে সব মিলিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সামিটের আটটি কেন্দ্রের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট, যা বেসরকারি খাতের প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ। যদিও নানা কারণে কেন্দ্রগুলো বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ই বসে থাকে। তবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নিয়মিতই ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় পিডিবিকে।

আইএমইডি বলছে, ইউনিটপ্রতি উচ্চমূল্য, ক্যাপাসিটি ও ওভারহোলিং চার্জ; স্বল্পমূল্যে জ্বালানি ও জমি ক্রয়; সহজে ব্যাংকের ঋণপ্রাপ্তি এবং শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের তহবিল সংকটের সমাধান নেই।

আইএমইডির প্রতিবেদনে পিডিবি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), নেসকো, শ্রেডা, ইজিসিবি, পাওয়ার সেল, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), আরপিসিএলসহ বিভিন্ন সংস্থা ২০১৩ সাল থেকে নেওয়া ৬৭টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো প্রায়শই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবিকে লোকসান গুনতে হবে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এর আগের ১২ বছরে সংস্থাটি লোকসান গুনেছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতে সরকার মোট যা লোকসান করেছে, তার চেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে গত দুই অর্থবছরে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতার মাত্র ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এর কারণ, জ্বালানি ও কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের সরবরাহ করতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category