
শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৬৭দিন
নিজস্ব প্রতিনিধি
শেখ হাসিনার গত ১৪ বছরের দুঃশাসনে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন-খারাবি, টর্চার সেল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছাত্রী হেনস্তাসহ প্রায় সব ধরনের অপকর্মে বেপরোয়া ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। দেশের শিক্ষাঙ্গন গুলোতে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগের এই সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন। অনেক সন্ত্রাসী ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তখন লোক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মূল ঘটনা আড়ালের অপচেষ্টা চালাতে দেখা যায়। এতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সমস্যা সমাধান কিংবা অধিকার আদায়ে ছাত্রলীগের ভূমিকা তেমন দেখা যায় না। বরং উল্টা ছাত্রলীগের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামতে দেখা যায়। নানা গ্রুপে বিভক্ত জঙ্গি ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যেও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
১৪ বছর ধরে ছাত্রলীগ মূলত আলোচনায় এসেছে হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই কিংবা টেন্ডারবাজির কারণে। জঙ্গি ছাত্রলীগের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের মুখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অবস্থান করতে পারছে না। ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকায় চর্চা বা ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা একপ্রকার নিষিদ্ধ। কোন গ্রুপ বা সংগঠন সেটা করতে চাইলে উল্টা ছাত্রলীগের সন্ত্রাস চালায় তাদের উপরে। উপরন্তু নানা রকম স্বার্থের কারণে সংগঠনটিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভিন্ন উপদল বা দলাদলিতে মারামারির ঘটনা প্রায়ই জড়িয়ে পড়ে সংগঠনটির সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উন্নয়নকাজের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির মতো অপরাধ তো আছেই। ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এ ধরনের অপরাধের অভিযোগও রয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা তো এখনও সবার মনে আছে। ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ২০১৯ সালের ৬ই অক্টোবর আবরারকে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করে। গত এক বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ১৫ বার সংঘর্ষ হয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই গত বছরের ১৭ই জুলাই একজন সাধারণ ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যাপক আন্দোলন করেছিলেন।
সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রাবাসে ২ ছাত্রলীগ নেত্রী এক ছাত্রীকে নির্যাতন করার ঘটনায় ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে এবং বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। ইবির ওই ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী খাতুনের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও কর্মী তাবাসসুম ইসলাম প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে তাকে নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করেন।
এর আগে গত ৬ই ফেব্রুয়ারি বুয়েট ক্যাম্পাসে এক লরি চালককে পিটিয়ে ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ৩ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে গত ১১ই ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের নেতা পারভেজ আলী হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ১২ই ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগ।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বঙ্গবাজারের একটি দোকানের মালিক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে অমর একুশে হলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হাসান সোহাগকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
এমনকি, ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রলীগের নেত্রী ও কর্মীদেরকে বাছাই করে বড় নেতাদের কাছে যৌনদাসী হিসেবে পাঠানোর অভিযোগও করেছে সেখানকার কমিটির শীর্ষ নেত্রীরা।
Leave a Reply