আজ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : রাত ৮:১৮

বার : শনিবার

ঋতু : গ্রীষ্মকাল

শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৭১ দিন দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের লুটপাটের স্বর্গরাজ্য রেলওয়ে

শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৭১ দিন

দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের লুটপাটের স্বর্গরাজ্য রেলওয়ে


শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৭১ দিন

শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৭১ দিন

নিজস্ব প্রতিনিধি

শেখ হাসিনার দু:শাসনে লুটপাটের আরেকটি খাত হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। দিনে দিনে রেলওয়ের দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। লুটপাট হচ্ছে জনগণের কষ্টের টাকা। খোদ সরকারের আজ্ঞাবহ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০টির দুর্নীতির খাত চিহ্নিত করেছিল। দুর্নীতি কমাতে মোট ১৫টি সুপারিশ করেছিল তারা।

এই চিহ্নিত খাত গুলোর একটিতেও দুর্নীতি কমেনি। বরং আরো বেড়েছে। রেলওয়ের আগে নেয়া প্রকল্পগুলোর খরচ এখন বেড়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো প্রকল্পের খরচ ১০ গুণও বেড়েছে।
রেলমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, দুদকের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে তারা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু এত দিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাস্তবায়ন করা হয়নি কোনো সুপারিশ।

দুদক তখন রেলে যে ১০ টি খাতে দুর্নীতির কথা বলেছিল সেগুলো হলো: রেলওয়ের অধীনে ওয়াগন, কোচ, লোকোমোটিভ ক্রয় ও সংগ্রহ; স্টেশন সিগনালিং ব্যবস্থার পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন; ডাবল লাইন, সিঙ্গেল লাইন, ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ; রেলওয়ের ভূমি অধিগ্রহণ, যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন নিলামে যন্ত্রাংশ বিক্রয়, রেলওয়ের অধীনে ওয়ার্কশপগুলো ও স্লিপার ফ্যাক্টরি কার্যকর না করে আমদানির মাধ্যমে অনিয়ম। এছাড়া নিয়োগ এবং টিকিট বিক্রিতেও অনিয়মের কথা বলা হয় তখন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি প্রকল্প-নির্ভর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এই প্রকল্প প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন সবখানেই দুর্নীতি। কেনাকাটার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়। দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে একটা দুর্নীতির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। রেলে দুর্নীতির কালো বিড়ালের থাবা দীর্ঘদিন ধরে আছে। ফলে রেলে লাখো কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও কোনো উন্নয়ন হয় না।

২০১০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এ অনুমোদন হওয়ার সময় চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই ২০১৬ সালে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে প্রকল্প ব্যয় এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। নির্মাণ শুরুর আগেই প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায় ১০ গুন বা ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। অস্বাভাবিক ব্যয় বাড়ানোর পরও এই প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

রেলওয়ের কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে হরহামেশাই। মহা- হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় গত জুনে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, বাজারের চেয়ে ১৫-২০ গুণ বেশি দাম দিয়ে রেলওয়ে নানা যন্ত্রপাতি কিনছে। রেলগাড়ি লাইনচ্যুত হলে চাকা তুলতে ব্যবহৃত ‘লিফটিং জ্যাক’ বাজারে কিনতে পাওয়া যায় ১৯ হাজার টাকায়, কিন্তু রেল তা কিনেছে তিন লাখ টাকায়। একইভাবে লোহার পাত ছিদ্র করার ৬৫ হাজার টাকার একটি ড্রিলিং মেশিন কেনা হয়েছে ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকায়। বাজারমূল্যের চেয়ে আট গুণ বেশি দামে কেনা হয়েছে লোহার পাত কাটার যন্ত্র ‘কাটিং ডিস্ক’। এইভাবে কেনাকাটায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে রেলওয়ের। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলওয়ের ১৫টি কার্যালয়ের কেনাকাটায় সরকারের মোট ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৪২৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

রেলের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালে সংস্থাটির লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা। লোকসানের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে রেলওয়ের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও। ২৫ বছর আগে যেখানে এক টাকা আয় করতে গিয়ে ৯৬ পয়সা ব্যয় করতে হতো সংস্থাটিকে, সেখানে বর্তমানে এক টাকা আয় করতে গিয়ে রেলওয়ের ব্যয় হচ্ছে দুই টাকা ৭৮ পয়সা। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছররেও সংস্থাটিতে উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা।

গত আড়াই দশকে মোটা অংকের বিনিয়োগ পেয়েছে রেল খাত। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয় ৮৩টি উন্নয়ন প্রকল্প। এতে ব্যয় হয় ২০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। বর্তমানে চলমান রয়েছে ৩৪টি প্রকল্প, যেগুলোর ব্যয় এক লাখ ৪১ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। এত ব্যয়ের বিপরীতে উল্টে লোকসানের পথে হাঁটছে রেলওয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category