
শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৭৪দিন
নিজস্ব প্রতিনিধি
শেখ হাসিনার দু:শাসনের ধাক্কা লেগেছে ঢাকার ফুটপাতেও। আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ সিণ্ডিকেট ফুটপাত থেকে বছরে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি করছে। চাঁদাবাজির এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়মিত ভাগ পাচ্ছেন শীর্ষ আওয়ামী নেতারাও।
শুধু, রাজধানীই নয়, সারা দেশের মহানগরীগুলোর ফুটপাত আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। এমপি-মেয়র থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা এই চাঁদাবাজির সাথে জড়িত। মাঝেমধ্যে জনগণের চোখে ধুলা দিতে কিছু এলাকায় ফুটপাত উচ্ছেদ করলেও, কয়েকদিন পরই চাঁদার রেট বাড়িয়ে বসানো হচ্ছে হকার।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তরার হাউস বিল্ডিং ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় মূল রাস্তার মাঝখানে হকারদের ভ্যানের দীর্ঘ সারি। হকাররা ভ্যানে করেই বিক্রি করছেন নানা পসরা। উত্তরার বিভিন্ন সেক্টর ছাড়াও এ অবস্থা বিরাজ করছে আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডিতে। আর পুরোনো এলাকা মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড়, রাজধানী সুপার মার্কেট, ডিআইটি মোড়, দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত। দৈনিক বাংলার মোড় থেকে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকি হয়ে ফকিরাপুল মোড়। ফকিরাপুল মোড় থেকে নয়াপল্টন হয়ে কাকরাইল মোড়। পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট, জিপিও, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত, পল্টন মোড় থেকে তোপখানা রোড হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিজয়নগর পর্যন্ত সড়কগুলোর দুই পাশে সারি সারি করে বসানো হয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট। এছাড়াও রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, আজিমপুর, লালবাগ, সদরঘাট, লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজার, বাবুবাজার, সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও রেলগেট, কমলাপুর, মুগদা, বাসাবো, মাদারটেক, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, কাজীপাড়া, গাবতলি, শ্যামলী, আদাবরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে অসংখ্য দোকানপাট।
এসব স্থানে ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তাও দখল করে রেখেছে হকাররা। ফুটপাথের দোকান থেকে অল্প দামে জিনিসপত্র কিনতে পারলেও চলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। এ কারণে ব্যাপক ক্ষুব্ধ নগরবাসী। বিভিন্ন সময় তারা ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবির কারণে সিটি করপোরেশন থেকে বারবার হকার উচ্ছেদে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালেও প্রতিবারই সকালে উচ্ছেদ করলে বিকেলে দোকানপাট নিয়ে বসে যায় হকাররা। অনেক সময় সকাল-বিকেল দুইবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও আবার পরে দোকান নিয়ে বসে পড়ে তারা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, হকাররা বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেতাদের কর্মী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকেন। নেতারা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে মিছিলে হকারদের নিয়ে যান। এছাড়া সরকারি রাস্তা ও ফুটপাতে ব্যবসা করলেও এসব হকারের কাছ থেকে সরকারি দলের নেতারা চাঁদাবাজি করেন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা লাইনম্যানদের মাধ্যমে চলে যায় তাদের কাছে। মাস শেষে যার পরিমাণ দাঁড়ায় কয়েক কোটি টাকা। এ টাকার অংশ সিটি করপোরেশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন দফতরেও যায় বলে প্রচার আছে। ফুটপাত ধরে মানুষের হাঁটা দূরে থাক, কোনো কোনো এলাকায় ফুটপাতে মানুষ ঢুকতেই পারছে না। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, মেয়র ও কিছু পুলিশ সদস্য এসব হকার বসিয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পরিসংখ্যান মতে, নগরীর ১৬৩ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে। এর মধ্যে ১০৮ দশমিক ৬০ কিলোমিটার ফুটপাতই এখন অবৈধ দখলে। আর ২২৮৯ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৫৭২ দশমিক ৪২ কিলোমিটার রয়েছে বেদখল। এগুলোতে সরকার দলের অঙ্গ সংগঠনে নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় বসেছে পণ্যের পসরা। কোথাও কোথাও ফুটপাথ ছাড়িয়ে মূল সড়ক পর্যন্ত বসছে তারা।
Leave a Reply