
শেখ হাসিনার দু:শসানের ৫৩৭৬দিন
নিজস্ব প্রতিনিধি
শেখ হাসিনার দু:শাসনে ভিন্নমত ও বিরোধী রাজনীতিকদের নিবর্তনের নতুন হাতিয়ার গায়েবী মামলা। কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে পুলিশ দিয়ে মামলা করিয়ে বিরোধী দল ও ভিন্নমত হয়রানির ঘটনা অতীতে কখনো ঘটেছিল কি না সেটা জানা যায়নি। তবে শেখ হাসিনা দু:শাসনের এই নতুন সংযোজনে হয়রানির শিকার হাজারো ভিন্নমত এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী।
গত ১৫ বছরে তথাকথিত ক্রসফায়ার ও গুম করার মাধ্যমে হাজারো বিরোধী নেতাকর্মীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গায়েবী মামলা দিয়ে জেলে কত মানুষ আটক রেখেছেন শেখ হাসিনা তাঁর কোন হিসাব নেই। ক্রসফায়ার ও গুম নিয়ে দেশে-বিদেশে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। সর্বশেষ র্যাবের ৬ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বাহ্যিক দৃষ্টিতে ক্রসফায়ার ও গুম হ্রাস পেলেও গায়েবী মামলা থামছে না।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে গায়েবী মামলায় আসামী বানানো শুরু হয়েছে বিরোধী নেতাকর্মীদের। ইতোমধ্যেই গত ১৫ বছরে বিএনপি ও জামায়াতের ২৫ লাখের বেশি নেতাকর্মী বিভিন্ন সাজানো মামলার আসামী। গায়েবী অভিযোগে এসব মামলার পর বিরোধী দলের কর্মীদের বাড়ী-বাড়ী হানা দিচ্ছে দলীয় কর্মীতে ঠাঁসা পুলিশ, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিএনপি’র ২৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। তাছাড়া দলটির সক্রিয় নেতা ও সংগঠকরা কয়েক ডজন এমনকি শত শত মামলার সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীকে আন্দোলনের চেয়ে আদালতে হাজিরা ও মামলা চালানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় প্রতিদিনই বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থককে বিচারকের সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে। তবে বেশিরভাগের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্পষ্ট ও দুর্বল।
সম্প্রতি বিএনপি নেতা সাইফুল আলম নিরবকে রাজধানীর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তোলা হয়। তার নামে ৩১৭ থেকে ৩৯৪টি মামলা রয়েছে। তিনি ও তার আইনজীবীরা মামলার সঠিক সংখ্যা বলতে পারছেন না। বিএনপি নেতাদের দাবি, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রায় ৮০০ নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং ৪০০ জন গুম হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি’ (এইচআরএসএস) এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্ট মাসে সারা দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৭টি রাজনৈতিক মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ১২ হাজার ১২৮ জনকে। আসামিদের মধ্যে নাম উল্লেখ রয়েছে ১ হাজার ৩৩ জনের। আর অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ১১ হাজার ৯৫। এক মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিএনপি-জামায়াতের ৪৯৪ জনসহ মোট ৫০১ জন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সংস্থাটি বলেছে, তুলনামূলক বিশ্লেষণে আগস্ট মাসে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি তার আগের মাসের তুলনায় অবনতি হয়েছে।
এক মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিএনপি-জামায়াতের ৪৯৪ জনসহ মোট ৫০১ জন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিরোধী দলের ১৪টি সভা আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপি বরাবরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন এবং আটক দলীয় রাজনীতিকদের মুক্তির দাবি করে আসছে।
মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, মামলার আসামিরা মাসের পর মাস জেলে থাকেন, সেখানে নানা হয়রানির শিকার হন। আইনজীবীদের মতে, রাজনৈতিক মামলায় জামিন পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Leave a Reply