
শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৮১দিন
নিজস্ব প্রতিনিধি
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের মুখে উন্নয়নের জোয়ারের বয়ান শুনতে শুনতে মানুষের কান ঝালাপালা হলেও স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশা দেখা যায় হাসপাতালে গেলে। দেশের যে কোন জায়গায় সরকারি হাসপাতাল গুলোতে ঢুকলে মনে হয় হাসপাতাল নয়, কোনো জীর্ণ বস্তিতে এসেছে মানুষ। একটি ছোট সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ১০-১৫ জন রোগী এবং ১০-১৫ জন আত্মীয়-স্বজনের অবস্থান দেখে তাই মনে হওয়ার কথা। ভ্যাপসা গরম, ফ্যানগুলো নষ্ট। দুর্গন্ধময় ওয়ার্ড। সাধারণ ওয়ার্ডের পাশাপাশি অনেক হাসপাতালের মেঝেতে অথবা বারান্দায় তীব্র গরমের সময় বা হিমেল শীতে রোগীদের ঠাঁই হয়। শীতে অনেক সাধারণ রোগী নিউমোনিয়া হয়ে মেঝেই ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ রাজধানীর অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোর একই অবস্থা।
এসব হাসপাতালে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের ট্রে আলাদা রাখারও ব্যবস্থা নেই। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা মুগদা জেনারেল হাসপাতাল নয়, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট, কিডনি ও মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, পঙ্গু হাসপাতাল, মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ক্যান্সার ইন্সটিটিউট ও বক্ষব্যাধি হাসপাতালে এমন বেহাল দশা। পচা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হাসপাতালের রোগীরা। বেশিরভাগ ওয়ার্ডের আশপাশে নানা ধরনের বর্জ্য ফেলে রাখা হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী, নার্স ও ডাক্তারদের বিছানাপত্র এবং অ্যাপ্রোনসহ ব্যবহৃত কাপড়চোপড় নোংরা, দুষিত পচা পানিতে ধোয়া হয়। রোগীর মল-মূত্র, পুঁজ আর রক্তমাখা এসব কাপড়-চোপড়, চাঁদর, বালিশের কাভার কোনোমতে ধুয়ে শুকানোও হয় নোংরা পরিবেশেই। ভালোভাবে পরিষ্কার না করায় জীবাণুসহ নোংরা অবস্থায় চাদর, কম্বল, বালিশের কভার ইত্যাদি রোগীদের ব্যবহারের জন্য দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল আছে, যন্ত্রপাতি ওষুধপথ্যের সরবরাহ যাচ্ছে নিয়মিত, আছে চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী; শুধু নেই চিকিৎসা সেবা। সরকারি হাসপাতালে অনেক দামি ও দরকারি যন্ত্রপাতি পড়ে থাকে, অনেক দিন পর্যন্ত সেগুলো আলোর মুখই দেখতে পায় না। আবার অনেক জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে এমন অত্যাধুনিক মেশিন পাঠানো হয়, যা চালানোর মতো দক্ষ জনবল তাদের নেই। ফলে সরকারি তহবিলের অপচয় ছাড়া আর কিছু হয় না। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে এসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির গুরুতর তথ্য জানা গেছে।
আর সরকারি হাসপাতালগুলোর এমন বেহাল দশা তৈরী করে গত ১৫ বছরে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অনুগত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা, স্থানীয় প্রভাবশালী এমপি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। লুটপাট সম্পর্কে অতীতে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও রহস্যজনক কারণে সবসময় নীরবতা পালন করেছেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো সরকারি হাসপাতালে ২১ শতাংশ চিকিৎসা যন্ত্রপাতির প্যাকেটই খোলা হয় না। ১১ শতাংশ ব্যবহারের আগেই নষ্ট হয়ে যায়, ১১ শতাংশ যন্ত্রপাতি ঠিক থাকলেও ব্যবহারই করা হয় না, ১০ শতাংশের ব্যবহার হয় আংশিক। বাকি থাকল ৪৭ শতাংশ যন্ত্রপাতির সুবিধা ভোগ করেন প্রভাবশালীরা।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন শত কোটি টাকা।
Leave a Reply