
শেখ হাসিনার দু:শাসনের ৫৩৮৭দিন
নিজস্ব প্রতিনিধি
শেখ হাসিনার দু:শাসনে ছাত্রলীগের এক সন্ত্রাসীর হাতে আরেক সন্ত্রাসী নিহত হলেও খুনিরা বেকসুর খালাস পায়। কথায় আছে ‘সাত খুন মাফ’। সেই বাংলা প্রবাদ শেখ হাসিনা’র শাসনে ছাত্রলীগের বেলায় প্রযোজ্য। যেমন, ২০১০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্মমভাবে খুন হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর। এ ঘটনায় করা মামলায় পরে এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুকসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে বাদীর নারাজি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর আদালতের নির্দেশে মাশলাটি অধিকতর তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এতে আগের আটজনসহ আরও দুইজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
আসামিরা সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায়ে ২০১৭ সালের ৭ মে ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতাকর্মীর প্রত্যেকেই বেকসুর খালাস পান। অবশ্য রায় হওয়ার আট মাস পর আবু বকরের পরিবার ও গণমাধ্যম খবরটি জানতে পারে। কারণ, রায় ঘোষণার বিষয়টি আবু বকরের বাবা-মা, এমনকি বাদীকেও আগে জানানো হয়নি।
এভাবেই গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে অনেক শিক্ষার্থী নিহত হলেও বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত হত্যা মামলাগুলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলার বিচারই শুধু বিচারিক আদালতে শেষ হয়েছে। অবশ্য এ রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল এখনও আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ। দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা শুরু থেকেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে। একইভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত আরও সাতটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিচারও এখন আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন দিতে অনেক সময় নিয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিন পরে বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হলেও সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের অনেকেই এরই মধ্যে চাকরিসহ বিভিন্ন কারণে এলাকায় নেই। মূলত এসব কারণেই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে নিহত হয়েছেন পাঁচ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপুর লাশ ক্যাম্পাসের ড্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়। যার কোনোটির বিচার হয়নি এখনও।
তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের হাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী, ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি হল দখলকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কর্মী ও গণিত বিভাগের ফারুক হোসেন, একই বছর ১৫ আগস্ট শোক দিবসের টোকেন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিম হত্যা, ২০১২ সালের ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্লাহ আল হাসান ওরফে সোহেল হত্যা, ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দ হত্যা ও ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু হত্যা উল্লেখযোগ্য। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি এখনও।
ভুক্তভোগীদের পরিবারের অভিযোগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় সরকারের ওপর মহলের নির্দেশে মামলাগুলোর তদন্তে শিথিলতা দেখায় পুলিশ। এছাড়া মামলা চলার কিছুদিন পর পর সরকারের ইশারাতেই তদন্ত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। সেসব মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়, সেগুলোও আদালতে নিশ্চল করে রাখা হয়। এমন হয়রানির কারণে এক সময় ভুক্তভোগীরা মামলার বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
Leave a Reply