আ ম ম আরিফ বিল্লাহ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পক্ষ বিপক্ষ:
স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আর বিপক্ষের শক্তি বলে যারা এতদিন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একমাত্র দাবিদার বলে গত পঞ্চাশ বছর মাঠ গরম করে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে আসছিলো আজকে তাদের অবস্থান কোথায়? এই গোষ্ঠীই আজকে স্বাধীনতার প্রধান শত্রুরূপে আবির্ভূত হয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি ছিল:
পূর্ব বাংলা বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মৌলিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার, শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ইত্যাদি।
আজকের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার এই অবৈধ স্বৈরাচার কি করছে:
জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে! জনগণের ভোটাধিকার হাইজ্যাক করেছে! লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে! নজিরবিহীন সিন্ডিকেট করে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে জনগণের পকেট খালি হয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে!
উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জবাবদিহিতা নেই! লুটপাট অবারিত হয়েছে! সীমান্তে সতর্ক প্রহরা শিথিল করে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ! ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশে অবৈধভাবে কাজ করে বছরে ষাট হাজার কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ভারতে পাচার করছে!
উজানে পানি প্রত্যাহার করে দেশকে মরুভূমি বানানোর প্রক্রিয়া চলছে! ফারাক্কা ও তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে বছরে লক্ষ কোটি টাকার সেচ কার্য ব্যাহত করা হচ্ছে। সবচেয়ে লজ্জাজনক ও কলঙ্কজনক অধ্যায় হলো এই সরকার ভারতের সাথে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করেছে! এই হচ্ছে জয় বাংলা এবং বঙ্গবন্ধু চেতনাবাদীদের আমলনামা!!!
ভেবে দেখুন! কথায় কথায় জয় বাংলা আর বঙ্গবন্ধু বলে দেশটাকে একটা সত্যিকারের জাহান্নামে রূপান্তরিত করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা অবৈধ স্বৈরাচার তো বলেই ফেলেছেন: “ভারতকে যা দিয়েছি আজীবন মনে রাখবে”!!!
প্রশ্ন হচ্ছে উনি কি এভাবে দেশ এবং দেশের জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে পারেন? বিনিময়ে কি পেয়েছে বাংলাদেশ? তিস্তা চুক্তিটিও বাস্তবায়ন করতে পারেনি! উনি যা দিয়েছেন তা কি উনার ব্যক্তিগত বা পৈত্রিক সম্পত্তি? কিভাবে দিলেন!
উনার নিজেরেই তো ম্যান্ডেট নেই। উপরের আলোচনায় একটা শিশুও হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আজকে আর কিছুই নেই।
দেখা যাক যাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি বলা হয় আজকে তারা কি করছে:
নিবন্ধন বঞ্চিত হচ্ছে। আন্দোলন করছে। ঠিক মত সভা সমাবেশ করতে পারছে না। হামলা মামলার শিকার হচ্ছে। গুম খুনের শিকার হচ্ছে! জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য দাবি জানাচ্ছে! গায়েবী মামলায় আটক লক্ষ লক্ষ বন্দির মুক্তি দাবি করছে!
বার বার প্রহসনের নির্বাচন করায় দলীয় সরকারের পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছ। ভারতীয় আধিপত্যবাদ, আগ্রাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।
এখন ভেবে দেখুন! কারা সত্যিকারের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আর কারা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। একটি প্রবচন দিয়ে শেষ করতে চাই: “দিল্লির দাসত্বের জন্য পিণ্ডি থেকে স্বাধীনতা অর্জন করিনি”।
তাই আজকে এই বাস্তবতায় আলোকে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সকল দোদুল্যমানতার অবসান ঘটিয়ে এই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎখাত করতে হবে।
ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে গণবিপ্লব ও গণ অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।
সর্বোপরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সুশাসন ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
লেখকঃ সাবেক চেয়ারম্যান, ফার্সি ও উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply