![ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও কারাদণ্ড দিয়েছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ অনুগত আদালত](https://www.amardesh.co.uk/uploads/shares/Yunus-Lead_Story-1_Jan-2024-01-01-13-24-12.png)
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও কারাদণ্ড দিয়েছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ অনুগত আদালত
নিজস্ব প্রতিনিধি
শেষ পর্যন্ত নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও কারাদণ্ড দিয়েছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ অনুগত আদালত। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সোমবার ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা। তবে আপিলের শর্তে তাঁকে জামিনও দেওয়া হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গায়ে কলঙ্ক দিতে দীর্ঘ দিন থেকেই অপচেষ্টায় ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এক রকম ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন তিনি। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়া হয় ২০১০ সালেই। যদিও ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইউনুস। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে ক্ষুদ্র ঋণের চিন্তা বাস্তবায়ন করেছিলেন তিনি। এজন্য শান্তিতে নোবেলও পেয়েছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই তাঁকে সেই ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেন। এরপর শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন। সর্বশেষ শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দণ্ড পাওয়া অপর তিনজন হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর মামলাটি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
মামলায় গত ৬ জুন ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস ও অন্যরা। আপিল বিভাগ গত ২০শে আগস্ট সেই আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেন।
এরপর গত ২২শে আগস্ট শ্রম আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় গত ৯ই নভেম্বর। এতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। গত ২৪শে ডিসেম্বর রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন (পহেলা জানুয়ারি) ধার্য করেছিলেন আদালত।
মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না।
মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয় না।
অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ৯ই নভেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজন বিবাদী লিখিতভাবে আদালতকে বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্যৎ তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে। মামলায় নিয়োগ স্থায়ী না করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রশাসনিক ও দেওয়ানি মামলার বিষয়।
আদালতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছিল, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়, সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।
রায় ঘোষণার ৫ মিনিটেই জামিন:
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় সাজা পাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার শর্তে জামিন দিয়েছেন আদালত। সোমবার সাজা ঘোষণার পর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালতে এ জামিন আবেদন করা হয়। পরে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে রয়েছেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সারা হোসেন ও খাজা তানভীর আহমেদ। অপরদিকে কলকারখানার পক্ষে রয়েছেন এডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
এদিন রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বর ও আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। খবর সংগ্রহের জন্য ভিড় জমান দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।
Leave a Reply