ভালো-মন্দ মিশিয়েই মানুষ। কেউ বেশি ভালো হয়, কেউ আবার ভালো-মন্দের মিশেল। কেউ যদি কর্মস্থলে আপনাকে বারবার পদানত করার চেষ্টা করতে থাকে, বা ইচ্ছে করে আপনার কাজের খুঁত ধরতে থাকে, কিংবা আপনার ব্যাপারে নানা গালগপ্পো ফেঁদে সবাইকে আপনার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলে, তখনই আপনার বুঝতে হবে যে, ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির আসলে যুক্তিতে মুক্তি মেলে না, মুক্তি মেলে কটুক্তিতে! এবং তিনি আসলেই আপনার পেছনে লেগেছেন।
এর মানে কিন্তু এই নয় যে, আপনি কাজ পারেন না বা আপনার কর্মকুশলতায় ঘাটতি আছে। কেউই শতভাগ নিখুঁত হয় না-তা কর্ম বা ব্যক্তিজীবন, যেটিই হোক না কেন! সবাই চেষ্টা করে যায়। কর্মস্থলে কিছু মানুষ আছেন, যারা নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে অন্যের কাজের ভুল শুধু খুঁজে বেড়ান। অন্যদের কাঠগড়ায় দাঁড় করান অবলীলায়। যদিও নিজেদের ক্ষেত্রে তাদের সম্বল শুধু চাপা! তারাই অন্য সহকর্মীদের জীবন বিষিয়ে তোলেন নানা উপায়ে। অন্যকে টেনে নিচে নামানোতেই তাদের আনন্দ।
যে পেছনে লাগে, সে কেমন?
সাম্প্রতিক সময়ে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের কয়েকজন গবেষক একটি গবেষণায় অংশ নেন। সেই গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছিল জার্নাল অব লিডারশিপ অ্যান্ড অরগানাইজেশনাল স্টাডিজে। তাতে দেখা গেছে, অন্যকে টেনে নিচে নামানোর উপরিউক্ত কাজগুলো সাধারণত করে থাকেন কর্মস্থলে যাদের কর্মকুশলতা কম, তারাই। স্বাভাবিকভাবেই তারা বেশি কর্মকুশল সহকর্মীদেরই লক্ষ্যে পরিণত করেন।
দিনশেষে সব কাজ মুখ দিয়েই শেষ করে ফেলা যায় না, কিছু কাজ মাথা খাটিয়েও করতে হয়। যেহেতু তাদের ওখানেই ঘাটতি, তাই যাদের মাথা বেশি কাজ করে তাদের মাটিতে টেনে নামানোর মিশনে নামা হয়। যাদের পারফরম্যান্স ভালো, তাদের জন্য অন্য সহকর্মীকে খাটো করে দেখানোর কোনো প্রয়োজন হয় না। এমনিতেই ঊর্ধ্বতনদের গুড বুকে থাকেন। যার পারফরম্যান্স দেখানোর সামর্থ্য কম থাকে, তারা ঈর্ষাবশত বেছে নেন বাঁকা পথটি এবং তা অবশ্যই ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্যই। এক কথায়, ল্যাং মারার চেষ্টা একেই বলে।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, কর্মস্থলে যারা অন্য সহকর্মীর পেছনে লাগেন এবং অন্যদের যারা টেনে নামিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁরা আসলে নিজেরাই এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে। এই অভিজ্ঞতা যে শুধু তাঁদের কর্মজীবন থেকেই পাওয়া হয় তেমনটা কিন্তু নয়।
অনেক সময় ব্যক্তিজীবনেও তাঁরা ক্রমাগত অপমানিত হতে থাকেন, পরিবারের কেউই হয়তো তাঁদের ক্রমাগত ব্যক্তিক আক্রমণ করে থাকেন। সেই ট্রমাই তাঁদের প্ররোচিত করতে থাকে অন্যদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই করতে। তাঁরা সুবিধাজনক পদে গেলেই মনে করেন যে, এবার অন্যদের পালা! সেই মনোভাব থেকেই শুরু হয় অন্যকে টেনে নামানোর চেষ্টা।
Leave a Reply