আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : সকাল ১০:৩৬

বার : শনিবার

ঋতু : বর্ষাকাল

‘কালপুরুষ’ কত নম্বর পেল?

এ দেশীয় অন্যান্য সিরিজে একটি ত্রুটি প্রায়শই দৃশ্যমান থাকে। সেটি হলো, মূল চরিত্রাভিনেতার পাশাপাশি হাজির হওয়া অন্যান্য ছোট চরিত্রে প্রয়োজনীয় নৈপুণ্য দৃশ্যমান হয় না। তবে এক্ষেত্রে ‘কালপুরুষ’ দারুণভাবে ব্যতিক্রম।প্রচলিত সাই-ফাই ঘরানায় টাইম ট্রাভেল বেশ পরিচিত একটি বিষয়। অর্থাৎ, বর্তমান থেকে অতীতে ফিরে যাওয়া অথবা বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে যাওয়া। এর উল্টোটাও যে হয় না, তা কিন্তু নয়। এ ধরনের বিষয়বস্তুতে অসংখ্য সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বা সিরিজ আমরা দেখেছি। এবার তেমন একটি গল্পই আমাদের দেশীয় সিরিজে উঠে এল প্রায় নিখুঁতভাবে!

দেশী ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি’তে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘কালপুরুষ’। পরিচালক সালজার রহমান। গল্পও তাঁরই। বলা হচ্ছে এটি একটি মিস্ট্রি-সাই-ফাই-ড্রামা। গল্প প্রসঙ্গে চরকি বলছে, ‘বাস্তবতা ও যুক্তিকে হার মানায়—এমন এক নৃশংস খুনের রহস্য অনুসন্ধানের অদৃষ্টযাত্রায় মিরাজ বাস্তব, অবাস্তব ও স্মৃতির এক অদ্ভুত চক্রে ঘুরতে থাকে।’
গল্পের শুরুতেই থাকে তেমনই একটি খুনের ঘটনা। সেটির তদন্তের পথ ধরেই এগিয়ে যেতে থাকে কাহিনি। খুনি কে—মূলত এই প্রশ্নেরই উত্তরের সন্ধান চলে। ঘটনা আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন খুন হওয়া নারী প্রেগন্যান্ট ছিলেন বলে খবর মেলে। এরপর শুরু হয় তথাকথিত জেরা। পাশাপাশি উঠে আসে তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরাজের ব্যক্তিগত জীবনও। এমনই সময় এক অদ্ভুত ফোন কল এবং একটি সিটিটিভি ফুটেজে রহস্যময় ব্যক্তি শেহজাদ চৌধুরীর খোঁজ পাওয়া যায়। আর তখনই ঘুরে যায় গল্পের মোড়।
পুরো ওয়েব সিরিজটিকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বা ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের দেখার উপযুক্ত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আগেই। সুতরাং প্রত্যাশিতই ছিল যে, কিছু দৃশ্য তেমন থাকবে। যে বিষয়টি বোঝার জন্য আসলে ‘কালপুরুষ’ দেখতে বসা হলো, তা ছিল সাই-ফাই ঘরানার প্রয়োগ। এই ক্ষেত্রে পরিচালককে লেটার মার্ক দেওয়াই যায়। তেমন কোনো মার্ভেল টাইপ গ্রাফিক্সের সাহায্য ছাড়াই তিনি বিষয়টি পর্দায় সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। এবং বলা উচিত যে, অত্যন্ত কৌশলী প্রক্রিয়ায় তিনি একটি সাই-ফাই-মিস্ট্রিকে দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পেরেছেন।

এখানে বলতেই হয়, সাই-ফাই ড্রামা ‘কালপুরুষ’-এর গল্প তেমন নতুন কিছু নয়। ওটিটির যুগে যারা ‘ডার্ক’ বা ‘১৮৯৯’ নামের সিরিজগুলো নেটফ্লিক্সে দেখেছেন, তারা এ ধরনের গল্পের সঙ্গে সুপরিচিত। এসব সিরিজেরও মূল বিষয়বস্তু টাইম ট্রাভেলই। তবে এ ঘরানায় কেবল বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে নিয়ে গিয়ে অসাধারণ ভিএফএক্সে চমকে দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকে না। বরং দর্শককে এই টাইম ট্রাভেলের অন্যান্য দিকগুলোতে টেনে নেওয়া হয়। ‘কালপুরুষ’ও সেই কাজটিই করেছে। অতীতে গিয়ে বর্তমানের সব বদলে দেওয়ার নিদান এখানে মেলে না। বরং এটিই বলে দেওয়া হয় যে, যা ঘটেছে তার পরিবর্তন করা কঠিন। এবং বলতেই হয় যে, সেই কাজটি করতে গিয়ে দর্শকদের একটি সঠিক আবহে নিয়ে যাওয়ার কাজটি ঠিকভাবেই করতে পেরেছে ‘কালপুরুষ’।সিরিজটি একেবারে নিখুঁত ছিল না। সমস্যা কিছু ছিল। যেমন: মৃত নারীর নাম ও অনুসরণ করা ধর্মবিশ্বাসের বিষয়ে একেকবার একেক তথ্য পাওয়া গেছে। আবার নারীর যে ধরনের নাম (ফারিয়া রানি বাইন) উল্লেখ করা হয়েছে, তার সঙ্গে এতদঅঞ্চলের প্রচলিত উদাহরণ মেলানো একটু কঠিন। আবার কখনও ধানমন্ডি থানার কথা শোনা যাচ্ছে, সাইনবোর্ডে দেখতে হচ্ছে আকাশ নগর থানা! যেকোনো একটা অনুসরণ করলেই আসলে ভালো হতো। তাতে আর কানে-চোখে বিবাদ বাঁধে না। অন্যদিকে, সাই-ফাই ঘরানার মধ্যে আধ্যাত্মিক দর্শনের কিছু মিশ্রণের চেষ্টা কেন জানি খানিকটা অদ্ভুতুড়ে লাগে। তাও সেই নিদান এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে, যিনি কিনা ধর্মভেদে গায়ের গন্ধের পার্থক্য খোঁজেন! এতে কেন জানি পুরো বিষয়টাই খারিজ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। অন্তত সচেতন দর্শকদের কাছে তো অবশ্যই। এবার অভিনয়ের প্রসঙ্গে আসা যাক। ‘কালপুরুষ’-এ অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, এফ এস নাঈম, তানজিকা আমীন, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ইমতিয়াজ বর্ষণ, প্রিয়ন্তি উর্বি, সুষমা সরকার, রেজওয়ান পারভেজ, জান্নাতুল মাওয়া লাজুক প্রমুখ। একটি কথা প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো—এ দেশীয় অন্যান্য সিরিজে একটি ত্রুটি প্রায়শই দৃশ্যমান থাকে। সেটি হলো, মূল চরিত্রাভিনেতার পাশাপাশি হাজির হওয়া অন্যান্য ছোট চরিত্রে প্রয়োজনীয় নৈপুণ্য দৃশ্যমান হয় না। তবে এক্ষেত্রে ‘কালপুরুষ’ দারুণভাবে ব্যতিক্রম। এই সিরিজে সব অভিনয়শিল্পীদের পারফরম্যান্সে একটা ভারসাম্য ছিল। ফলে সুর কখনও কেটে যায়নি। তাছাড়া মিরাজের চরিত্রে এফ এস নাঈম দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। রহস্যময় শেহজাদ চৌধুরীর চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী ছিলেন বরাবরের মতোই সহজাত। আর এই দুজনের জুটিতে পুরো সিরিজ দেখাটাই উপভোগ্য হয়েছে বেশ। এর বাইরে তানজিকা আমীন ও ইমতিয়াজ বর্ষণের প্রশংসা করতেই হবে। জয়ন্ত চট্যোপাধ্যায় অভিনীত চরিত্রের ব্যাপ্তি বেশি ছিল না, তবে নতুন সিজন হলে তিনি যে তাক লাগিয়ে দেবেন, তার ঝলক এবারই দেখা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category