আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : দুপুর ১২:৩১

বার : শনিবার

ঋতু : বর্ষাকাল

আজ রাতেই রেমালের আঘাত!! সরাসরি ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে ৯ জেলা।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এ রূপ পরিগ্রহ করে প্রবল গতিতে রুদ্রমূর্তি নিয়ে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অভিমুখে। গতিপথ অপরিবর্তিত থাকলে আজ রবিবার রাতে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যভাগে কেন্দ্রমুখ রেখে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে এই অতি শক্তিশালী ক্রান্তিয় সাইক্লোনটি। খুলনার সুন্দরবন থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত উপকূলীয় জেলাগুলোতে পড়বে এর প্রভাব। গতকাল সন্ধ্যা থেকে সাগর উপকূলভাগে থেমে থেমে বইছে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়। গভীর সঞ্চারণশীল সজল মেঘমালায় দেশের অধিকাংশ এলাকার আকাশ ছেয়ে গেছে। উপকূলভাগে জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া দফতর এবং কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, পূর্বের সাইক্লোন আম্ফান,ইয়াসের থেকেও শক্তিশালী হচ্ছে রেমাল। বিশাল আকৃতির রেমালের বাম দিকের ৩০ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উপর দিয়ে ও ৭০ ভাগ অংশ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। স্থল ভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। আঘাত হানার সময় আট ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলভাগ প্লাবিত হতে পারে। এসময় অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। রাত সাড়ে ৮ টায় আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার জানায়,ঘূর্ণিঝড় রেমাল খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা,বাগেরহাট ও খুলনা জেলার উপর দিয়ে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত করার সম্ভাবনা প্রবল। এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জানান, রেমাল মোকাবিলায় সার্বিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন,এই ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকা কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সাত থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গতকাল শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মুহিববুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয়েছে। এটি উপকূলের ১৩টিসহ ১৮ জেলায় রেমাল আঘাত হানতে পারে। আজ রোববার ভোরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। রেমাল অতিক্রমের সময় বাতাসের গতিবেগ ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে, কখনো কখনো এটি ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান,গভীর নিম্নচাপটি ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল’-এ পরিণত হয়েছে সন্ধ্যা ৭টার দিকে। ফলে মোংলা ও পায়রায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তিনি জানান,রেমাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর মাঝামাঝি যেকোনো জায়গা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে। নয় জেলা রয়েছে ঝুঁকিতে। এগুলো হলো-সাতক্ষীরা,বাগেরহাট,খুলনা,বরিশাল,বরগুনা, পটুয়াখালী,ভোলা,পিরোজপুর,নোয়াখালী। তবে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান,ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার, মোংলা থেকে ৪০৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ৪০০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দূরে ছিল।

বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালে সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-১ শক্তিমাত্রার ঝড় হিসেবে আজ রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার সকালের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, আজ রবিবার রাত ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে উপকূলে আঘাত করতে পারে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার খেপুপাডার মধ্য দিয়ে এবং খেপুপাডার নিকট দিয়ে আজ মধ্যরাত নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগ অতিক্রমকালে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার থাকবে যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর সঙ্গে থাকবে অতি বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাস।সুতরাং যেসব এলাকার উপর দিয়ে রেমাল অতিক্রম করবে, একটা ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়বেই। খুলনার সুন্দরবন থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সব উপকূলীয় জেলায় এর আওতায় পড়বে। রেমালের প্রভাব ৩০ ভাগ ভারত ও বাংলাদেশে পড়বে ৭০ ভাগ। সারা দেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ২৪ ঘণ্টা ৩০০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। তবে সারা দেশে একরকম বৃষ্টি হবে না। চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার অঞ্চলে এ ধরনের বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ধসের ঝুঁকি থাকবে।

এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলো বিশ্লেষন করে জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল স্থল ভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘন্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার। দেশের আট বিভাগে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হবে এবং মঙ্গলবার পর্যন্ত ঘূর্নয়মান মেঘমালা থাকতে পারে। সবচেয়ে ভারি বৃষ্টি হবে আজ, কাল ও পরশু ২৮ মে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category