আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : দুপুর ২:৫৬

বার : শনিবার

ঋতু : বর্ষাকাল

টি-২০ ফরম্যাটে আমরা আসলে ভালো খেলি না: আকরাম খান

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কতদূর যেতে পারে, কী করতে পারবে? এ নিয়ে চিন্তা বা আলোচনার অন্ত নেই। ক্রিকেট সমর্থকরা চোখে দেখছেন বাংলাদেশের পারফরম্যান্স। হয়তো ধরেও নিয়েছে, বাংলাদেশ দল খুব একটা ভালো করতে পারবে না। তবুও, তার আশাবাদী। তারা সাবেক ক্রিকেটার, ক্রিকেট বোদ্ধাদের কাছ থেকে আশার কথা শুনতে চায়। মনকে বোঝাতে চায় যে না, বাংলাদেশ খারাপ খেলবে না বিশ্বকাপে।

কিন্তু বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কছে সিরিজ পরাজয়ই সব আশা শেষ করে দিয়েছে। তবুও বিশ্বকাপ শুরু হলে যদি বাংলাদেশ দল ভালো করতে পারে! এমন প্রত্যাশা করছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, বিসিবির অন্যতম সিনিয়র পরিচালক আকরাম খান।বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেলতে পারে না- এ বাস্তব সত্য স্বীকার করে নিয়ে আকরাম খান প্রত্যাশা করেন, অন্তত বাংলাদেশ দল এমনভাবে খেলে যেন, কিছুটা হলেও সম্মান পায় সবার কাছে। ওয়ানডেতে যেমন নিজেদেরকে ‘গোনায় ধরার’ মত দলের পর্যায়ে নিতে পেরেছে, টি-টোয়েন্টিতেও যেন সে জায়গায় নিতে পারে, সে প্রত্যাশাই করেন আকরাম।

ইতিহাস জানাচ্ছে সেই আইসিসি ট্রফি থেকেই আকরাম খান বিপদের বন্ধু। ত্রাণকর্তা। ৯৭’র আইসিসি ট্রফিতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তার ম্যাচ জেতানো ইনিংসটিকে ধরা হয় আইসিসির সহযোগী সদস্য বাংলাদেশের বিশ্বমঞ্চে পা রাখার সোপান।
বিশ্বকাপের আগে সাক্ষাৎকারে আকরাম খান জানিয়েছেন বাংলদেশ দল নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা। সে সাক্ষাৎকারই তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

আকরাম খান: শুনতে খারাপ লাগে, তারপরও বলা- আসলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমরা ভাল খেলি না। তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমার প্রত্যাশা হলো, দল যেন ভাল খেলে। ভাল দল হিসেবে যেন নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সবার কাছ থেকে সমীহ আদায় করতে সক্ষম হয়। সবাই যেন রেসপেক্ট করে। ওয়ানডেতে যেভাবে আমাদেরকে সবাই মোটামুটি হিসেবের মধ্যে আনে, ঠিক তেমন অবস্থায় পৌঁছানো।
আর আমরা যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে গত এক-দুই বছর যে ক্রিকেটটা খেলেছি, অন্তত সেটা খেলা। আমি বলবো না আমরা সেমিফাইনাল বা ফাইনাল খেলবো। আমার মনে হয় সেটা অতিরিক্ত চাওয়া হবে। বাট আমাদের ভাল খেলা খুব জরুরি। আফগানিস্তান গত বিশ্বকাপে যেমন খেলেছে, আমাদের সে পর্যায়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে খেলা উচিত।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশ একটা পর্যায়ে গেছে অনেক আগেই। টি-টোয়েন্টিতে কিছুতেই সে পর্যায়ে যেতে পারেনি। কেন?

আকরাম: সত্যি কথা বলতে কি, আমরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করি এবং নিয়মিত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলি, সে তুলনায় আমাদের উন্নতি অনেক কম। পারফরমেন্স যা করি তার চেয়ে ভাল খেলা উচিৎ।ওয়ানডেতে আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করে ফেলছি। নিজেদের দিনে আমরা অনেক বড় দলকে হারাই। বড় দলগুলো একটু খারাপ খেললেই আমরা তাদের হারিয়ে দেই; কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমরা তা পারি না। আমাদের প্রতিপক্ষ খারাপ খেললেও আমরা তা কাজে লাগিয়ে জিততে পারি না।

যে মনোভাব নিয়ে খেলা উচিৎ, আমরা তা খেলতে পারি না। দল হিসেবে খেলতে পারি না। টি-টোয়েন্টি ২০ ওভারের খেলা হলেও মোটামুটি তার তিনটি পার্ট। প্রথম পার্ট হলো প্রথম ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে। ৬ ওভার কেমন ছক, কৌশল ও পরিকল্পনায় খেলতে হবে, তারপর ৭ থেকে ১৫ ওভার কোন লক্ষ্যে আর শেষ ৫ ওভারই বা কেমন ছকে ব্যাটিং করবো, ওই সময়ে বোলিং প্ল্যান কি হবে? সেই প্ল্যানটা হচ্ছে না। প্ল্যান করেও কিছু হচ্ছে না।এখন ক্রিকেটাররা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, তাতে তাদের আরও ভালো খেলা উচিৎ। আমাদের সাকিব, তামিম, মুশফিক ও রিয়াদরা হয়ত দল হিসেবে খুব ভাল খেলতে পারেনি, সেটা দুঃখজনক; কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে অনেক ভাল খেলেছে। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অর্জন, কৃতিত্ব ও প্রাপ্তি যথেষ্ঠ। ব্যক্তিগত ভাবে তারা সবাই ভাল প্লেয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

গড়পড়তা তারা সেই ২০০৬-২০০৭ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলে আসছে। এটা সৌভাগ্য যে তারা এতদিন দারুনভাবে পারফরম করেছে। সেটা তাদের কৃতিত্ব। কিন্তু তাদের জায়গাটা সেভাবে কেউ নিতে পারেনি। তাদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

ভারতে দেখেন এতগুলো প্লেয়ার কিন্তু একটানা এত লম্বা সময় জাতীয় দলে খেলতে পারে না। তাদের জায়গায় কেউ না কেউ নিয়ে নেয়। প্রতি বছরই কেউ না কেউ উঠে আসে; কিন্তু আমাদের দলে সেভাবে তামিম, সাকিব, মুশফিক ও রিয়াদদের জায়গা নেয়ার মত পারফরমার খুব কম। কারণ, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটাররা বিসিবির কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা পায়; কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যে উন্নতি করা, তা হয়নি। ক্রিকেটাররা নিজেদের উন্নতি ঘটাতে পারেনি।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এই দল কতদূর যেতে পারে?

আকরাম: আমাদের দেশে যে স্ট্যান্ডার্ড আর কালচার, তা যদি খুব ভালমত লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন আমাদের শুরুটা ভাল হলে ভাল খেলি। আর শুরুটা খারাপ হলে খারাপ খেলতে থাকি। অর্থাৎ আমাদের শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরু ভাল হলে আমাদের ভাল খেলার রেকর্ড বেশি। কাজেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আসলে কী করবে, কতদূর যাবে? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমার মনে হয়, শুরুর ওপর নির্ভর করবে আসলে আমরা কতদূর যাব।

এবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে শুরুটা ভাল হয়নি। এটা একটা অপ্রত্যাশিতভাবে আমরা বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের মত দলের কাছে সিরিজ হেরে বসেছি। যেটা মোটেই ভাল লক্ষ্মণ হয়নি। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কাজটা সহজ হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category