আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : সকাল ৮:৪৭

বার : শনিবার

ঋতু : বর্ষাকাল

কেয়ামত পর্যন্ত পরিশোধ হবে না রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ঋণের বোঝা

লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ঋণের বোঝা কেয়ামত পর্যন্ত পরিশোধ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সঠিক তথ্য দেয় না।

শনিবার (৮ জুন) এফডিসিতে প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে কমানোর অঙ্গীকার থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এই লক্ষ্য অর্জনে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এছাড়া বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিশেষ উদ্যোগ না থাকায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন কঠিন হবে। কর প্রশাসনে সুশাসন ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর আহরণ করতে পারছে না। দেশে যে পরিমাণ টিআইএনধারী আছেন, তাদের অর্ধেকও আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না। রাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারে। বর্তমানে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ রয়েছে তা পরিশোধে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিয়ে থাকে সেটি সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্য গোপন করার কৌশল সুশাসনের অন্তরায়। বাজেট অর্থায়নে দেশীয় ব্যাংকের ওপর অতিমাত্রায় ঋণনির্ভর হলে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ব্যাহত হবে। বর্তমানে রিজার্ভের যে পরিস্থিতি তা নিয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। তবে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি।’তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে আঞ্চলিক বৈষম্যের পাশাপাশি শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বৈষম্য বাড়ছে। সামাজিক নিরাপত্ত কর্মসূচির উপকারভোগী নির্ধারণে রাজনৈতিক বিবেচনা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কর্তৃত্বের কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এ কর্মসূচির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রিজার্ভের ঘাটতি, ডলারের উচ্চমূল্য, আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা, অর্থপাচার, লাগামহীন দুর্নীতিসহ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে অত্যন্ত কঠিন একটা বৈরী সময়ে উপস্থাপিত হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে নানা সংকটের কথা বলা হলেও এর উত্তরণের কৌশলগত কোনো স্পষ্টতা নেই। আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নেই কোনো পদক্ষেপ। অর্থপাচার রোধ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, অপচয় কমানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। যারা কর ফাঁকি দেন তাদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে যারা নিয়মিত কর দেন তাদের ওপর বাড়তি কর আদায়ের ছক দেখা গেছে ঘোষিত বাজেটে।’তিনি বলেন, ‘পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা, পুঁজি পাচার, হুন্ডি বন্ধসহ ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো উদ্যোগের কথা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘাটতি বাজেট পূরণে রয়েছে ব্যাপক ব্যাংক নির্ভরতা। ঘোষিত বাজেটে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে যে পরিমাণে ঋণ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে তার সুদ দাঁড়াবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১৪.২৪ শতাংশ বা মোট বাজেটের সাত ভাগের এক ভাগ। ফলে মূল ঋণ ছাড়াও বাড়বে ঋণ পরিশোধের চাপ।’হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘দেশের আড়াই কোটি মানুষের মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ডলার। অথচ কর দিচ্ছে মাত্র ২৮-৩০ লাখ লোক। মানুষের কর দেওয়ার প্রবণতা খুবই কম। ৮০ শতাংশ বিত্তবান সঠিকভাবে কর দিতে চান না। নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কার চেয়েও কম আয়কর প্রদান করে আমাদের দেশের মানুষ। কর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা দূর না করে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করলে সেটি ভালো ফল দেবে না।’বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। তবে অবলোপন, আদালতে স্থগিতাদেশ ও বিশেষ কারণে লুকিয়ে রাখাসহ বর্তমানে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। যা প্রস্তাবিত বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি। আমাদের কঠিন শর্তের ঋণ বাড়ছে। ডেট সার্ভিসিংয়ের বোঝা বাড়ছে। সে কারণে আমরা যা ঋণ নিচ্ছি তা সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সুশাসন, জবাবদিহিতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category