ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হওয়ার আট মাস পর প্রথমবারের মতো গতকাল সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবটি সত্যিই বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ৩১ মে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত তিন ধাপের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। গতকাল সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটি পাস হয়। নিরপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ সদস্যই এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। শুধু রাশিয়া ভোট দানে বিরত ছিল।এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে ব্যাপারে তারা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছুক।
তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে আমেরিকা যদিও বলেছে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি মূলত ইসরায়েলের পক্ষ থেকেই জো বাইডেন দিয়েছেন।
তবে গতকাল নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার পর জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের প্রতিনিধি রুট শাপির বেন-নাফতালি বলেন, ‘হামাস উপকৃত হয় এমন কোনও অর্থহীন আলোচনায় ইসরায়েল অংশ নেবে না।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েলের প্রতিনিধির এ ধরনের বক্তব্য থেকে অনুমান করা যায়, তাঁরা যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নন।
এদিকে বৈশ্বিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান মার্সি কর্প বলেছে, সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করা উচতি। কারণ সেখানে বেঁচে থাকা অর্ধেক জনসংখ্যাই অনাহারে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে প্রায় ৩০০ ফিলিস্তিনি। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ১১২ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ৮ মাসের এই ইসরায়েলি অভিযানে আহতের সংখ্যা সাড়ে ৮৪ হাজার।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আট মাসের ইসরায়েলি অভিযানে ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা নিজেদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের হিসেবে, ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
Leave a Reply