চাকরিতে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ভূমি দখলসহ নানা অপকর্ম করে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের বিরুদ্ধে। জাতীয় পার্টির আমলে জাহিদ মালেকের বাবা কর্নেল মালেক ছিলেন মন্ত্রী ও ঢাকা সিটির মেয়র। তখন রাজনীতিতে জাহিদ মালেকের নামগন্ধও ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কর্নেল মালেক আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মানিকগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার টিকিট নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এরপর পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আগমন ঘটে জাহিদ মালেকের। এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী হন তিনি। এরপর গড়ে তোলেন আওয়ামী লীগের কতিপয় পদধারী নেতাকে নিয়ে নিজস্ব বলয়। অনুগতদের দিয়ে করতে থাকেন চাকরি-নিয়োগ-টেন্ডার বাণিজ্য, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, ভূমি দখলসহ নানা অপকর্ম। এভাবেই গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নামে-বেনামে তাঁর সম্পদের তথ্য। এ সময়ে তিনি মানিকগঞ্জ শহরে ১০ তলা বাণিজ্যিক ভবন, সভাসমাবেশ করার জন্য গড়েছেন শুভ্র সেন্টার, আলিশান বাড়ি, বিশাল খামার বাড়ি। সাটুরিয়ায় গড়ে তুলেছেন গরুর খামার ও কাঁচামালের বিশাল আড়ত। অভিযোগ রয়েছে, যে বিশাল খামার এলাকায় করেছেন তা তাঁর মায়ের নামে স্কুল করার কথা বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে চাপ দিয়ে নেওয়া জমি। অভিযোগ রয়েছে তাঁর পরিবারের মালিকানাধীন থাকাবস্থায় সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাখ লাখ গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতেরও। তিনি এতই প্রভাবশালী ছিলেন যে, এখনো নির্যাতিতরা মুখ খুলতে সাহস পান না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বয়স্ক লোক জানান, মন্ত্রী হওয়ার আগে কিছুই ছিল না। থাই কারখানা বেচার কথা হয়েছিল। সবকিছু করেছেন মন্ত্রী হওয়ার পর। জাহিদ মালেকের কামতা এলাকায় কাঁচামালের আড়তসংলগ্ন নাহার গার্ডেনের ম্যানেজার মো. শুকুর আলী বলেন, ‘মন্ত্রীর লোক আফছার উদ্দিন চেয়ারম্যান ও লাল মিয়া চেয়ারম্যান দলবল নিয়ে জমি লিখে দেওয়ার জন্য হুমকি দিতেন। শেষে এ বাগানে এসে জমি জোর করে লিখে নিয়ে যান। রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে দেননি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ আড়তের পাশের জমির মালিক বলেন, মন্ত্রীর নির্যাতন বলে শেষ করা যাবে না।
কামতা নাহার গার্ডেনের মালিক খাদেমুল ইসলাম পিনু বলেন, ‘আমার বাবা প্রায় ৯০ বিঘা জমি নিয়ে নাহার গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। এর দক্ষিণ পাশে কাঁচামালের আড়ত করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর সঙ্গে আমার ৭৪ শতাংশ জমি ছিল। অন্য জায়গায় জমি দেবেন বলে ৭৪ শতাংশ জমি দখল করে নেন। এরপর অন্য জায়গায় জমি দেওয়া দূরের কথা, কিছু টাকা নিয়ে জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। দলের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে অনবরত হুমকি দিতে থাকেন প্রাণনাশসহ আমার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার। জমি লিখে না দেওয়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা অব্যাহত রাখা হয়। এসব ঘটনায় আমার বৃদ্ধা মা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তার পরও এদের হাত থেকে জায়গা রক্ষা করতে পারি নাই। এরপর আমার বাগানবাড়িতে এসে নামমাত্র টাকা দিয়ে জোর করে জমি দলিল করে নিয়ে যান।’