সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২০ পূর্বাহ্ন

“পিকনিক শেষ হলে বাড়ি আসব, নাঈম মাকে বলেছিল”

bornomalanews
  • Update Time : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
  • ০ Time View

ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে রোববার সকালে মানুষের ঢল নেমেছিল। এ জমায়েত ছিল মোজাম্মেল হোসেন নাঈমকে শেষ বিদায় জানাতে।

এদিন নাঈমের সশরীরে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও সে ফিরেছে নিথর দেহে। এলাকায় অত্যন্ত নম্র-ভদ্র, বিনয়ী ও মেধাবী হিসেবে পরিচিত এ তরুণকে চিরবিদায় জানানোর কথা যেন ভাবতেই পারছিলেন না কেউ। অনেক লোকজনের ভিড়েও শোকে স্তব্ধ ছিল চারপাশ; বাকরুদ্ধ ছিলেন নাঈমের পরিবার আর প্রতিবেশীরা।

নাঈমের জানাজা শেষে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা মোতাহের হোসেন শামীম। প্রতিবেশী-স্বজনদের কোনো সান্ত্বনাই শান্ত করতে পারছিল না তাকে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোতাহের বলেন, “বাবার কাঁধে ছেলের মরদেহ পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি বস্তু। সেই মরদেহের খাটিয়া বহন করতে হচ্ছে আমাকে। জানাজায় উপস্থিত সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।”

পরে সকাল ১০টার দিকে ফতেহপুর ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে দাদা-দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয় নাঈমকে।

শনিবার গাজীপুরের শ্রীপুরে বনভোজনে যাওয়ার পথে দ্বিতল বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (ইইউটি) মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এদিন রাত আড়াইটার দিকে নাঈমের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশ ভারি হয়ে ওঠে।

শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুর গোলাম নবী ভুঁইয়া বাড়ির মোতাহের হোসেনের শাহীন ও নাহিদা ইয়াসমিন দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নাঈম ছিলেন দ্বিতীয়। ২০১৯ সালে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ভর্তি হন। তাদের পরিবার ফেনী শহরের মাস্টারপাড়া এলাকায় বসবাস করছে। নাঈমের বড় ভাই বাকপ্রতিবন্ধী।

ফাজিলপুর সাউথ ইস্ট ডিগ্রি কলেজের হিসাববিজ্ঞানের অধ্যাপক মোতাহার বলেন, “আমার ছেলে নাঈম অত্যন্ত বিনয়ী ও মেধাবী ছিল। তাকে ঘিরেই আমাদের পরিবারের অনেক আশা ছিল। চোখের সামনে এভাবে সব শেষ হয়ে যাবে, মানতে পারছি না।”

নিহতের জ্যাঠাতো বোন সুরভী বলেন, “বনভোজনে যাওয়ার আগের রাতে মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল নাঈমের। তখন সে মাকে বলেছিল, পিকনিক শেষে করে বাড়ি আসবো।”

“সেই থেকে চাচি ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। অনেকটাই নির্বাক হয়ে পড়েছেন।”

নাঈমের ফুপাতো ভাই সোহাগ বলেন, “ভাই অনেক মেধাবী ছিলেন। ফেনী শহরের হলি ফ্যামিলি ক্রিসেন্ট স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ফেনী পাইলট হাই স্কুলে ভর্তি হন তিনি। ২০১৯ সালে এসএসসি ও ২০২১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।”

এদিকে বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের তদন্তের মাধ্যমে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের চাচা মুফতি মোফাচ্ছের হোসেন মামুন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 bornomalanews24.com
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102