রাজধানীর শিশুমেলা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা, অসুস্থ শরীর নিয়ে। তাদের এই অবস্থান মিরপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট ও আগারগাঁও সড়কে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। দুই ঘণ্টা ধরে যানবাহনগুলো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে শিশুমেলার সামনে তিন রাস্তার মোড়ে আহতরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য অবস্থান শুরু করেন। এর আগে, শনিবার রাত থেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অনেকের হাতে স্যালাইন, ভাঙা পায়ে ব্যান্ডেজ, এবং ক্রাচে ভর করে তারা সড়কে অবস্থান করছেন। আন্দোলনকারীদের মুখে শোনা যায় নানা স্লোগান—“দালালি না বিপ্লব, বিপ্লব বিপ্লব”, “আস্থা নাই রে আস্থা নাই, দালালিতে আস্থা নাই”, “চিকিৎসা চাই, হয় মৃত্যু, নয় মুক্তি”—এমন নানা দাবি। আহতদের বক্তব্য, তাদের রক্তের বিনিময়ে দেশ থেকে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। কেউ পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন, কেউ টিয়ারশেলে অন্ধ হয়ে গেছেন, আবার কেউ পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অথচ, তাদের চিকিৎসা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে অবহেলা করা হচ্ছে।
নেসার উদ্দীন, একজন আহত শিক্ষক, বলেন, “আমি বনশ্রীতে আন্দোলন করেছি। আমরাই হাসিনা সরকারকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছি। আমরা বেঁচে আছি ঠিকই, কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা মরে গেলেই ভালো হতো। আমরা অধিকার নিয়ে বসেছি, দাবি নিয়ে নয়। রাজনৈতিক দলের কেউ কেউ উপদেষ্টা হয়ে অফিসে ব্যস্ত, কিন্তু আমাদের নিয়ে তাদের কথা বলার সুযোগ নেই। এটা খুবই দুঃখজনক।” তিনি আরও বলেন, “যদি রাজপথে জীবন দিতে হয়, তাও দেব। আমরা স্বাধীনতা রক্ষা করেছি, তাহলে কেন মানবেতর জীবনযাপন করবো? আন্দোলনের সময় তো কোনো ক্যাটাগরি ছিল না।”
মো. হাফেজ নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার অবস্থা গুরুতর। আমাদের রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে হবে। তারা অনেকবার এসেছে, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে, কিন্তু কাজ হয়নি। আমাদের পুনর্বাসন করতে হবে। আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে হবে। আমরা দেশের স্বার্থে আহত হয়েছি, এখন রাষ্ট্র আমাদের দেখার কথা। কিন্তু রাষ্ট্র দেখছে না বলেই আমরা পথে নেমে এসেছি। আমাদের পরিবার অচল হয়ে গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই করা হয়নি।”
অন্যদিকে, আগস্টের আহত যোদ্ধা মোহাম্মদ লিটন বলেন, “প্রকৃত ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে না। আমাদের স্বীকৃতি দেয় না। আশ্বাস দেয় না। আমাদের আন্দোলনে মুলা ঝোলানোর মতো অবস্থা হচ্ছে।”
আন্দোলনের ফলে শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও লিংক রোডে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আশপাশের এলাকায়ও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভের কারণে যান চলাচল বন্ধ, ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক ভোগান্তির চিত্র।