বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কোনো অবনতি নেই—এই মর্মে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই বিষয়টি উল্লেখ করেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির, যিনি প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেছিলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মধ্যে যে কিছুটা টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দেখা গেছে, বর্তমানে সেই সম্পর্ক কোন পর্যায়ে রয়েছে?
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এই প্রশ্নের জবাবে দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং ইতিবাচক। তিনি বলেন, “আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি। আমি আগেও ব্যাখ্যা করেছি, আমাদের সম্পর্ক সব সময় ভালো থাকবে। এখনো ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে।” তাঁর মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ভালো না থাকার কোনো উপায়ই নেই। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমাদের সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ, এতটাই গভীর যে, আমরা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে আমাদের বন্ধন এতটাই মজবুত যে, তা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।”
তবে তিনি স্বীকার করেন যে, মাঝে মাঝে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা বা মেঘ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, “এই মেঘগুলো মূলত অপপ্রচারের ফলেই তৈরি হয়েছে। অপপ্রচার কারা করছে, সেটা অন্যরা বিচার করবে। কিন্তু এই অপপ্রচারের কারণে আমাদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি। তবে মূল সম্পর্কের মধ্যে কোনো ঘাটতি তৈরি হয়নি।”
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জানান, ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, “ভারতীয় কর্মকর্তারা এখানে আসছেন, আমাদের প্রতিনিধিরাও সেখানে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে।” তাঁর এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগের ধারা অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
ড. ইউনূসের এই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের গভীরতা এবং স্থিতিশীলতার দিকটি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। যদিও মাঝে মাঝে কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, তবুও দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ক এতটাই মজবুত যে, তা সহজে ক্ষুণ্ণ হওয়ার নয়। অপপ্রচার বা ভুল বোঝাবুঝি যাই হোক না কেন, উভয় দেশই তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই আলোচনা থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক শুধু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কই নয়, বরং এটি একটি গভীর ও বহুমাত্রিক বন্ধন, যা সময়ের পরীক্ষায় বারবার উত্তীর্ণ হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই সম্পর্ক আরও গভীর ও মজবুত হবে বলেই আশা করা যায়।