জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কর্মসূচি হিসেবে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে দলটির নেতাকর্মীরা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এই অনুষ্ঠানটি ছিল তাদের রাজনৈতিক যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ, যা নতুন একটি দল হিসেবে তাদের প্রতিশ্রুতি ও লক্ষ্যের প্রতীক।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নেতাকর্মীরা বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন দলটির নেতারা। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ সকল সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু ফ্যাসিবাদের কারণে আজ আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। আমাদের একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান গড়ে তুলতে হবে। একটি নতুন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এবং তার জন্য গণ পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা জরুরি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আগামী দিনে তরুণরাই এই রাষ্ট্র গঠন করবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।”
এরপর নেতাকর্মীরা রায়েরবাজারে যান, যেখানে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের সময় শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার কবর জিয়ারত করেন। সকাল ১০টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এই অনুষ্ঠানটি ছিল তাদের সংগ্রামী চেতনা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল এক সমাবেশের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে জাতীয় নাগরিক পার্টি। এই সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন, যা নতুন এই দলের প্রতি মানুষের আশা ও প্রত্যাশার প্রতিফলন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির এই যাত্রা শুধু একটি রাজনৈতিক দল গঠনের গল্প নয়, বরং এটি একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের গল্প। তাদের লক্ষ্য শুধু ক্ষমতায় যাওয়া নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই নতুন দল কি তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবে? তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক, কিন্তু তাদের সংকল্পও দৃঢ়।
এই যাত্রা কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে তাদের নেতৃত্ব, সংগঠন ও জনসমর্থনের ওপর। তবে, একথা নিশ্চিত যে, জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্ম বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এখন দেখার বিষয়, এই অধ্যায় কতটা গৌরবময় হবে।