নারী শ্রমিকদের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিয়ে এক বিশাল দাবির পক্ষে আজ একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এবং আওয়াজ ফাউন্ডেশন একযোগে ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরেছে, যার মধ্যে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস নিশ্চিতকরণের আইনি ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং তার কঠোর বাস্তবায়ন অন্যতম।
৭ই মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এই সমাবেশ ও র্যালি যেন একটি শক্তিশালী বার্তা ছিল। যেখানে দাবি করা হয়েছে, নারী শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক আইএলও কনভেনশন ১৯০-এর স্বাক্ষর, কর্মস্থলে নারী সহিংসতা প্রতিরোধে শক্তিশালী আইন প্রণয়ন, এবং নারীদের জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সমাবেশ শেষে, র্যালিটি প্রেস ক্লাব থেকে পুরোনো পল্টন মোড় হয়ে আবারও প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে ঘোষিত দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, নারী শ্রমিকদের জন্য কর্মস্থলে সমান সুযোগ, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, এবং ট্রেড ইউনিয়নে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে উৎসাহ প্রদান। এছাড়াও, নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক জেন্ডার পলিসি তৈরি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা ছিল। এমনকি গৃহকর্মী এবং প্রান্তিক নারীদের জন্য ন্যায্য মজুরি ও সামাজিক নিরাপত্তা দাবি করা হয়েছে, যেন তারা মানবিক মর্যাদা পায়।
এছাড়া, নারীদের জন্য যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে, যাতে কর্মস্থলে নারীরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারে। চুক্তিভিত্তিক নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং নিয়োগপত্র প্রদান করে তাদের আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পরিবেশ দূষণ মোকাবিলারও দাবি জানানো হয়েছে।
এমনকি বক্তারা নিজেদের বক্তব্যে বলেছিলেন, “অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন, নারী ও কন্যার উন্নয়ন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা আজকের এই কর্মসূচি পালন করছি। বর্তমান সমাজে নারীরা নানা ধরনের বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, কিন্তু তাদের অধিকার, শিক্ষা, এবং কর্মসংস্থানে সমান সুযোগ সৃষ্টির দাবি এখন সময়ের প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের উপলক্ষে বক্তারা আরও বলেন, নারীর মর্যাদা, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী নারীরা এবং তাদের সহযোদ্ধা পুরুষরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। বিশেষ করে শ্রমজীবী নারীরা, যাদের বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে অবদান অপরিসীম, তারা এখনও মর্যাদার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার বলেন, “নারী শ্রমিকের মর্যাদা নিশ্চিত করা, কর্মস্থলে নারীর নিরাপত্তা এবং নারী-পুরুষের সহ-অবস্থান প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে নারীরা তাদের পুরস্কৃত ও সুরক্ষিত হতে পারে।”
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাদিজা আক্তারও নিজের বক্তব্যে বলেন, “অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের একমাত্র উপায় হলো নারী-পুরুষের সমতা এবং কাজের মর্যাদা। নারীদের সম অধিকার নিশ্চিত করে, নিরাপদ এবং নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা একটি টেকসই শিল্প গড়ে তুলব।”
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়াজ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মমতাজ বেগম, পোষাক শ্রমিক উন্নয়ন জনকল্যাণ সংস্থার সভাপতি বিলকিস বেগম, সাধারণ সম্পাদক ঊর্মি আক্তার সহ আরও অনেক বিশিষ্ট নেত্রী।
এই সমাবেশ থেকে উঠে আসা দাবিগুলি কেবল নারী শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য একটি জাগরণ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে। এটি তাদের ক্ষমতায়ন, মর্যাদা, এবং সমান সুযোগের জন্য এক অবিচলিত আন্দোলন, যা এখন সময়ের চাহিদা।