পঞ্চগড়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে আল আমিন (৩৮) নামে এক বাংলাদেশির মৃত্যু—এ যেন এক অমোচনীয় শোক, যা ছড়িয়ে পড়েছে নীরবতার মাঝে। শনিবার (৮ মার্চ) ভোরে, ঠিক যখন প্রকৃতি তার গভীর নিদ্রা ভেঙে ঘুমের দিক থেকে উঁকি দেয়, পঞ্চগড়ের অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় সুইডাঙ্গা সীমান্তে একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে। গুলির শব্দ শোনা মাত্রই, ক্ষণিকের জন্য সময় থেমে যায়।
আল আমিন, যিনি হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের জিন্নাতপাড়ার সুরুজ আলীর ছেলে, সেদিন অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজিত হন। তাঁর শোকাহত পরিবারকে এক মুহূর্তের জন্য জানানো হয়নি, যে সে আর কখনও তাদের কাছে ফিরে আসবে না। এ মৃত্যু কি কেবল একটি দুর্ঘটনা, না এক গভীর রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলাফল?
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেদিন ভোরে, আল আমিনসহ কয়েকজন যুবক ভারতীয় সীমান্তে গরু আনতে গিয়েছিলেন। অথচ, তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল জীবিকা নির্বাহ, সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারের প্রত্যাশায়। কিন্তু, বাস্তবতা তাদের কাছে কিছু ভিন্ন রূপে উপস্থিত হয়—৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ভাটপাড়া ক্যাম্প থেকে টহলরত বিএসএফ সদস্যরা, হঠাৎই, তাদের দিকে গুলি ছোঁড়ে। মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু অন্ধকারে তলিয়ে যায়।
এতটা দ্রুত? এতটুকু অনুমানও ছিল না। গুলি খেয়ে আল আমিন সাথীদের থেকে আলাদা হয়ে পড়েন, তাঁর দেহ সীমান্তে পড়ে থাকে। একটি মৃতদেহ—যা এভাবে পড়ে থাকতে পারে? সকালবেলা, স্থানীরা জানত, গুলির শব্দ থামলেও, একটি নিথর দেহ—এটি শুধু এক মৃত্যুর চিহ্ন নয়, প্রশ্নের এক অন্ধকার প্রেক্ষাপট।
তাঁর মরদেহটির ছবি দেখে নিশ্চিত হয়ে যায় পরিবার—এটাই তাদের প্রিয় আল আমিন। কিন্তু কে জানে, সেই মুহূর্তের মধ্যে কী ঘটেছিল, কীভাবে তার দেহটি শেষপর্যন্ত বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়? কিভাবে বা কেন? এর কোন উত্তর মিলবে কি কখনও?
এদিকে, নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, লে. কর্নেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা, এক দুঃখজনক শোকের মাঝে মন্তব্য করেন—পতাকা বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে, যাতে সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় প্রতিবাদ জানানো যায়। তবে, এর সাথে সাথে তিনি দাবি করেন, মরদেহটি দ্রুত ফেরত দেওয়ার জন্য। এই ঘটনায় এক নতুন মাত্রা যোগ হয়—একদিকে শোক, অন্যদিকে প্রতিবাদের এক অপ্রতিরোধ্য ঢেউ।
হয়তো, প্রতিবাদ শব্দের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ থাকবে—অথবা শীঘ্রই অন্য এক রূপে তা রূপান্তরিত হবে? প্রশ্ন গুলো, নিঃসন্দেহে, উত্তরহীন।