বাংলাদেশ ও ভারত, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংককে একটি বিশেষ বৈঠক আয়োজন করতে চলেছে। ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হতে চলা ষষ্ঠ বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) শীর্ষ সম্মেলন হবে ২-৪ এপ্রিল, এবং এই সম্মেলনে অংশ নেবেন দুই দেশের শীর্ষ নেতা, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে, এসব আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও, তাদের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের প্রচেষ্টা চলছে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও গভীরতর আলোচনা ও সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা, মো. তৌহিদ হোসেন, ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানিয়ে বলেন, “আমরা বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছি। এই বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করেছি।” এটি এমন এক সময়ের ঘটনা, যখন দুই দেশের মধ্যে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং আলোচনা চলছে, যা শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়েও মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
এদিকে, ফেব্রুয়ারির শুরুতে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ওমানে ভারত মহাসাগর সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎ করেন। এই বৈঠকে তারা একে অপরের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বিমসটেক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, এবং এরপর, জয়শঙ্কর এক্স-এ পোস্ট করে ওই আলোচনার বিষয়টি শেয়ার করেন। সেই বৈঠক ছিল সম্পর্কের আরেকটি শক্তিশালী ভিত্তি, যা দুই দেশের মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, উক্ত বৈঠকে উভয় পক্ষ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে, যার মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ এবং সহযোগিতার বিষয় ছিল প্রধান। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মধ্যে একটি বৈঠক হয়। এই বৈঠকটি ছিল আরো একটি মাইলফলক, যেখানে দুদেশের পরস্পর সম্পর্ক, কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়।
এমনকি গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের পরামর্শ বৈঠক (এফওসি) এবং চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লিতে ইন্ডিয়া এনার্জি উইক-এ বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টার অংশগ্রহণের ঘটনাগুলোও উল্লেখযোগ্য। এগুলো সেই সব মুহূর্ত, যেখানে বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরের সাথে তথ্য ও নীতি-পরামর্শ শেয়ার করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও গভীর সমঝোতার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দারুণ অবদান রাখতে পারে।
এছাড়া, ফেব্রুয়ারি মাসে নয়াদিল্লিতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে সীমান্ত-সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে এবং সমাধানের পথ খোঁজা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সব বৈঠকগুলোর মধ্যে একটি বিষয় স্পষ্ট, তা হলো বাংলাদেশ ও ভারত, দুই দেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে একমত, এবং সেগুলো মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়েও আলোচনা শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন, আর একইসঙ্গে সার্ক স্থায়ী কমিটির বৈঠক আয়োজনের জন্য ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই সমস্ত কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ ও ভারতকে যে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে, তা বলাই বাহুল্য।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া