ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হওয়া ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ এক উজ্জ্বল উৎসবের রূপ ধারণ করে শেষ হয়েছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন হাজারো মানুষ, যারা আনন্দের স্রোতে ভাসতে প্রস্তুত ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে এই আনন্দময় শোভাযাত্রাটি পুনরায় চারুকলা অনুষদে এসে শেষ হয়। পহেলা বৈশাখের এই বিশেষ দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে আবারও চারুকলা অনুষদে ফিরে আসে। শোভাযাত্রায় সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এবারের শোভাযাত্রায় ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিদেশি অতিথিরা অংশগ্রহণ করেছেন। এ বছর শোভাযাত্রায় প্রধান ৭টি মোটিফ রাখা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’, যা বাংলাদেশে দীর্ঘ সময়ের ফ্যাসিবাদী শাসনের চিত্র তুলে ধরে। এছাড়াও, এবারের শোভাযাত্রায় বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির পায়রা এবং পালকি প্রদর্শিত হয়েছে। বিশেষভাবে, ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানদের লড়াই সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানাতে তরমুজের ফালি মোটিফ হিসেবে রাখা হয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের কাছে প্রতিরোধ ও অধ্যাবসায়ের প্রতীক। বড় মোটিফের পাশাপাশি, এবারের শোভাযাত্রায় ৭টি মাঝারি মোটিফও রয়েছে, যার মধ্যে সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া এবং লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই শোভাযাত্রা যেন এক সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন, যেখানে ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সমকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সমন্বয় ঘটেছে, যা সকলের মনে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।