২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশে। দ্বিতীয় প্রান্তিকেও এই হার বাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকারি পরিসংখ্যানগুলোতে এ চিত্র স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। শুধু তাই নয়, এই সময়ের মধ্যে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মধ্যবর্তী পণ্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিও কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে, জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে, মূলধনি যন্ত্রপাতির জন্য ঋণপত্র খোলার হার ২৬ শতাংশ কমেছে, এবং একইভাবে মূলধনি যন্ত্রপাতির ঋণপত্র নিষ্পত্তি প্রায় ২২ শতাংশ কমেছে। এই পতন নতুন বিনিয়োগের অভাবের ইঙ্গিত দেয়। ২০২৩ সালের জুলাই-নভেম্বরের তুলনায় ২০২৪ সালের একই সময়ে ভোগ্যপণ্যের আমদানির ‘এলসি সেটেলমেন্ট’ ১৩ শতাংশ কমেছে। সরকারের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে এনবিআর গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৬২ শতাংশ কম রাজস্ব আহরণ করেছে; যেখানে আগের বছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এছাড়া, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৬৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগের নেওয়া ঋণের ৫৪ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ৮ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ঋণাত্মক ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর মুনাফার হার বাড়ানো হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী সুদহার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হবে। অর্থাৎ, সরকার সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে আরও বেশি অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে। এই পরিসংখ্যানের মূল উদ্দেশ্য হলো, অন্তর্বর্তী সরকার যে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধি করেছে, তার কারণ অনুসন্ধান করা। বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকার ভ্যাট বাড়িয়েছে। কিন্তু মূল বিষয় হলো, সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৩০ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় কমে গেছে। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে কর-জিডিপির অনুপাত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম কম। গত ১৫ বছরে দেশের জিডিপি বেড়েছে, কিন্তু রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত কমেছে। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ কর বা আয়করের অনুপাতও কম। ভ্যাট বাড়িয়ে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু সমস্যা হলো, ভ্যাট ধনী-গরিব সবার জন্যই সমান। কোভিডের পর থেকে এই সমস্যা প্রকট হয়েছে, এবং বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে তা আরও তীব্র হয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্তের কারণে সরকারের ভর্তুকি কমানো হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত বেশি। কর ফাঁকির টাকা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশে থাকে না, পাচার হয়ে যায়। প্রভাবশালীদের কর ফাঁকি বন্ধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বরং, সরকার বারবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। বিভিন্ন ধরনের করছাড়ের কারণে সরকারের রাজস্ব কমে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার